১২:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫
পুলিশ-র‌্যাব-আনসারের নতুন ইউনিফর্ম

পোশাক বদল না, দরকার রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ

  • ইমন রহমান
  • সর্বশেষ আপডেট : ০৭:৪৯:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫
  • 24

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক বদল করে কার্যত কোনো লাভ হবে না। এটি রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি ছাড়া পুলিশ, র‌্যাব কিংবা আনসারের চরিত্র কোনো দিন বদল করবে না। জনবান্ধব এবং পেশাদার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গড়ে তুলতে হলে সবার আগে দরকার রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধের গ্যারান্টি। একই সঙ্গে সরকারের বেআইনি আদেশের ক্ষেত্রে তাদের না বলা শিখতে হবে।

পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যদের পোশাক বদলে সরকারের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় এমন মন্তব্য করেন পুলিশের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাসহ অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংস্কারের অংশ হিসাবে বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার বাহিনীর পোশাক (ইউনিফরম) পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুলিশের জন্য আয়রন (লোহার), র‌্যাবের অলিভ (জলপাই) এবং আনসার বাহিনীর জন্য সোনালি গমের (গোল্ডেন হুইট) রঙের পোশাক হতে যাচ্ছে, যা শিগগিরই বাস্তবায়ন হবে। এর ফলে এ তিন বাহিনীর মোট ২ লাখ ৬৩ হাজার ৬৩৯ জন সদস্য নতুন পোশাক পাবেন।

এ প্রসঙ্গে সাবেক আইজিপি (পুলিশের মহাপরিদর্শক) মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘আচরণসহ পুলিশের বিরুদ্ধে অন্যান্য যেসব আভিযোগ আছে সেগুলো বিগত ১০০ বছর ধরেই আছে। এর মধ্যে দুই তিন দফায় ইউনিফরম বদল হয়েছে, তাতে কোনো আচরণগত পরিবর্তন হয়নি। তিনি বলেন, পোশাক বদল করে আচরণ পরিবর্তন হয়, পৃথিবীর কোথাও গবেষণা করে এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’ তিনি মনে করেন, ‘প্রত্যক্ষভাবে ইউনিফরমের সঙ্গে পারফরম্যান্সের কোনো সম্পর্ক নেই।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিতর্কিত ভূমিকা সব মহলে সমালোচিত হয়েছে। বিশেষ করে পুলিশের ভূমিকা ছিল ন্যক্কারজনক। নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার টিকিয়ে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা চালায় তারা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে পুলিশ। সারা দেশেই পুলিশ আত্মগোপনে চলে যায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে পুলিশি কার্যক্রম। তবে সব মহল থেকে দাবি ওঠে পুলিশ সংস্কারের। গঠিত হয় পুলিশ সংস্কার কমিশন। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে কমিশন।

পোশাক বদল নিয়ে সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘এখন আমরা অনেক কিছুই বলতে পারি যেহেতু পলিটিক্যাল গভর্নমেন্ট নেই। আগেও ওয়ান-ইলেভেনের সময় পুলিশ সংস্কারের অনেক চেষ্টা হয়েছে। রাজনীতিমুক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কার্যত শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি। এখন প্রশ্ন হলো-রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় এসে যদি হারুন আর বিপ্লবদের মতো পুলিশ সদস্যদের লালন পালন করে তাহলে পুলিশের চরিত্রের বদল হবে না। তিনি বলেন, পুলিশকে জনবান্ধব, জননন্দিত করতে হলে রাজনীতিমুক্ত করার কোনো বিকল্প নেই। পুলিশ সংস্কারের প্রস্তাবে আছে-পুলিশের কাজের জবাবদিহিতা সর্বক্ষেত্রে থাকবে। এই কথাগুলো সব সময় বলা হচ্ছে। কিন্তু যখনই পলিটিক্যাল পার্টি ক্ষমতায় আসে তখন এর থেকে দূরে চলে যায়।’

প্রসঙ্গত, সোমবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে পুলিশ, র‌্যাব ও আনসারের পোশাক বদলের সিদ্ধান্তটি গণমাধ্যমকে জানান। তিনি বলেন, ‘পোশাকের সাথে সাথে মনমানসিকতা সবকিছু পরিবর্তন হতে হবে। এক্ষেত্রে দুর্নীতি বন্ধে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে পুলিশের মোট সদস্য সংখ্যা ২ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৪ জন। তাদের মধ্যে নন পুলিশ (সিভিল) সদস্য ১০ হাজার ৯৯২ জন। সিভিল পুলিশ ছাড়া অন্যদের ইউনিফরম দেওয়া হয়। সরকারিভাবে প্রতি বছর প্রত্যেক পুলিশ সদস্যের জন্য তিন সেট শার্ট (হাফ হাতা) ও প্যান্ট বরাদ্দ রয়েছে। এছাড়া দুটি ফুলহাতা শার্ট এবং দুই বছর পরপর একটি জ্যাকেট দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, ‘যে পোশাক আমরা সরবরাহ করে থাকি এর জন্য যে বাজেট আছে তার মধ্যেই নতুন পোশাক রিপ্লেস হচ্ছে।’

র‌্যাব সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, র‌্যাবে বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ৯ হাজার ৩২০ জন। জনপ্রতি র‌্যাব সদস্যদের তিনটি করে পোশাক দেওয়া হয়, যা বাহিনী থেকে সরবরাহ করা হয়। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, র‌্যাবের একেকজন সদস্য বছরে তিনটি পোশাক পান। র‌্যাবে কেউ রেগুলার ফোর্স নয়। কেউ আগে, কেউ পরে যোগদান করেছে। সেভাবে যখন যার দরকার হয় তখন তার পোশাক দেওয়া হয়।

এদিকে বর্তমানে আনসার বাহিনীতে ‘অঙ্গীভূত সদস্যের’ সংখ্যা ৫১ হাজার ৬৬৭ জন। যাদের পোশাকের রং পরিবর্তন করা হবে। বর্তমানে আনসার সদস্যরা প্রতি বছর দুই সেট (জামা-প্যান্ট) পোশাক পান। এসব পোশাকের কাপড় আনসার সদর দপ্তর থেকে সরবরাহ করা হয়। আনসারের গণমাধ্যম শাখা সূত্রে জানা গেছে, আনসারের কোম্পানি তিনটা-ব্যাটালিয়ন, সাধারণ ও ভিডিপি। পোশাক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে শুধু সাধারণ আনসারের, যাদের অঙ্গীভূত আনসার বলা হয়।

শেষমেশ পোশাক বদল কতটা ফলপ্রসূ হবে জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ আরও বলেন, ‘পোশাক বদল করে চরিত্র বদলানো যায় না। পোশাকের সঙ্গে চরিত্রের কোনো সম্পর্ক নেই। পুলিশের ওপর দিয়ে এবার যে যন্ত্রণা গেল, পুলিশ যদি মনে করে ভবিষ্যতে আমরা এই যন্ত্রণা আর পোহাব না-তা হলে পুলিশকে সরকারের বেআইনি আদেশের ক্ষেত্রে না বলা শিখতে হবে।’

তিনি বলেন, ইউনিফরম বদলানো একটি সস্তা কাজ। এবারই প্রথম ইউনিফরম বদল হয়নি, আগেও অনেকবার বদল হয়েছে। সত্যিকারার্থে পরিবর্তন চাইলে আসল জায়গাতে হিট করতে হবে। পুলিশি কার্যক্রমে পলিটিক্যাল হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। সেটা করতে পারলেই জনগণের প্রত্যাশা পূরণে পেশাদার পুলিশ বাহিনী গড়ে উঠবে।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক ও অপরাধ বিশ্লেষক মুহাম্মদ আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, এর আগেও পুলিশের পোশাক বদল হয়েছিল। কিন্তু চরিত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে এবারের প্রেক্ষাপট অন্যান্য বারের চেয়ে ভিন্ন। এবার ছাত্র-জনতার বিশাল মুভমেন্টের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি হচ্ছে। সংস্কারে কমিশনও গঠন করা হয়েছে। যেহেতু সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, সেটি যদি শেষমেশ বাস্তবায়ন হয় তাহলে পোশাক পরিবর্তন কিছুটা কাজে আসবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সেভ করুন

পুলিশ-র‌্যাব-আনসারের নতুন ইউনিফর্ম

পোশাক বদল না, দরকার রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ

সর্বশেষ আপডেট : ০৭:৪৯:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক বদল করে কার্যত কোনো লাভ হবে না। এটি রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি ছাড়া পুলিশ, র‌্যাব কিংবা আনসারের চরিত্র কোনো দিন বদল করবে না। জনবান্ধব এবং পেশাদার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গড়ে তুলতে হলে সবার আগে দরকার রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধের গ্যারান্টি। একই সঙ্গে সরকারের বেআইনি আদেশের ক্ষেত্রে তাদের না বলা শিখতে হবে।

পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যদের পোশাক বদলে সরকারের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় এমন মন্তব্য করেন পুলিশের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাসহ অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংস্কারের অংশ হিসাবে বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার বাহিনীর পোশাক (ইউনিফরম) পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুলিশের জন্য আয়রন (লোহার), র‌্যাবের অলিভ (জলপাই) এবং আনসার বাহিনীর জন্য সোনালি গমের (গোল্ডেন হুইট) রঙের পোশাক হতে যাচ্ছে, যা শিগগিরই বাস্তবায়ন হবে। এর ফলে এ তিন বাহিনীর মোট ২ লাখ ৬৩ হাজার ৬৩৯ জন সদস্য নতুন পোশাক পাবেন।

এ প্রসঙ্গে সাবেক আইজিপি (পুলিশের মহাপরিদর্শক) মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘আচরণসহ পুলিশের বিরুদ্ধে অন্যান্য যেসব আভিযোগ আছে সেগুলো বিগত ১০০ বছর ধরেই আছে। এর মধ্যে দুই তিন দফায় ইউনিফরম বদল হয়েছে, তাতে কোনো আচরণগত পরিবর্তন হয়নি। তিনি বলেন, পোশাক বদল করে আচরণ পরিবর্তন হয়, পৃথিবীর কোথাও গবেষণা করে এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’ তিনি মনে করেন, ‘প্রত্যক্ষভাবে ইউনিফরমের সঙ্গে পারফরম্যান্সের কোনো সম্পর্ক নেই।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিতর্কিত ভূমিকা সব মহলে সমালোচিত হয়েছে। বিশেষ করে পুলিশের ভূমিকা ছিল ন্যক্কারজনক। নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার টিকিয়ে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা চালায় তারা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে পুলিশ। সারা দেশেই পুলিশ আত্মগোপনে চলে যায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে পুলিশি কার্যক্রম। তবে সব মহল থেকে দাবি ওঠে পুলিশ সংস্কারের। গঠিত হয় পুলিশ সংস্কার কমিশন। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে কমিশন।

পোশাক বদল নিয়ে সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘এখন আমরা অনেক কিছুই বলতে পারি যেহেতু পলিটিক্যাল গভর্নমেন্ট নেই। আগেও ওয়ান-ইলেভেনের সময় পুলিশ সংস্কারের অনেক চেষ্টা হয়েছে। রাজনীতিমুক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কার্যত শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি। এখন প্রশ্ন হলো-রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় এসে যদি হারুন আর বিপ্লবদের মতো পুলিশ সদস্যদের লালন পালন করে তাহলে পুলিশের চরিত্রের বদল হবে না। তিনি বলেন, পুলিশকে জনবান্ধব, জননন্দিত করতে হলে রাজনীতিমুক্ত করার কোনো বিকল্প নেই। পুলিশ সংস্কারের প্রস্তাবে আছে-পুলিশের কাজের জবাবদিহিতা সর্বক্ষেত্রে থাকবে। এই কথাগুলো সব সময় বলা হচ্ছে। কিন্তু যখনই পলিটিক্যাল পার্টি ক্ষমতায় আসে তখন এর থেকে দূরে চলে যায়।’

প্রসঙ্গত, সোমবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে পুলিশ, র‌্যাব ও আনসারের পোশাক বদলের সিদ্ধান্তটি গণমাধ্যমকে জানান। তিনি বলেন, ‘পোশাকের সাথে সাথে মনমানসিকতা সবকিছু পরিবর্তন হতে হবে। এক্ষেত্রে দুর্নীতি বন্ধে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে পুলিশের মোট সদস্য সংখ্যা ২ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৪ জন। তাদের মধ্যে নন পুলিশ (সিভিল) সদস্য ১০ হাজার ৯৯২ জন। সিভিল পুলিশ ছাড়া অন্যদের ইউনিফরম দেওয়া হয়। সরকারিভাবে প্রতি বছর প্রত্যেক পুলিশ সদস্যের জন্য তিন সেট শার্ট (হাফ হাতা) ও প্যান্ট বরাদ্দ রয়েছে। এছাড়া দুটি ফুলহাতা শার্ট এবং দুই বছর পরপর একটি জ্যাকেট দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, ‘যে পোশাক আমরা সরবরাহ করে থাকি এর জন্য যে বাজেট আছে তার মধ্যেই নতুন পোশাক রিপ্লেস হচ্ছে।’

র‌্যাব সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, র‌্যাবে বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ৯ হাজার ৩২০ জন। জনপ্রতি র‌্যাব সদস্যদের তিনটি করে পোশাক দেওয়া হয়, যা বাহিনী থেকে সরবরাহ করা হয়। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, র‌্যাবের একেকজন সদস্য বছরে তিনটি পোশাক পান। র‌্যাবে কেউ রেগুলার ফোর্স নয়। কেউ আগে, কেউ পরে যোগদান করেছে। সেভাবে যখন যার দরকার হয় তখন তার পোশাক দেওয়া হয়।

এদিকে বর্তমানে আনসার বাহিনীতে ‘অঙ্গীভূত সদস্যের’ সংখ্যা ৫১ হাজার ৬৬৭ জন। যাদের পোশাকের রং পরিবর্তন করা হবে। বর্তমানে আনসার সদস্যরা প্রতি বছর দুই সেট (জামা-প্যান্ট) পোশাক পান। এসব পোশাকের কাপড় আনসার সদর দপ্তর থেকে সরবরাহ করা হয়। আনসারের গণমাধ্যম শাখা সূত্রে জানা গেছে, আনসারের কোম্পানি তিনটা-ব্যাটালিয়ন, সাধারণ ও ভিডিপি। পোশাক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে শুধু সাধারণ আনসারের, যাদের অঙ্গীভূত আনসার বলা হয়।

শেষমেশ পোশাক বদল কতটা ফলপ্রসূ হবে জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ আরও বলেন, ‘পোশাক বদল করে চরিত্র বদলানো যায় না। পোশাকের সঙ্গে চরিত্রের কোনো সম্পর্ক নেই। পুলিশের ওপর দিয়ে এবার যে যন্ত্রণা গেল, পুলিশ যদি মনে করে ভবিষ্যতে আমরা এই যন্ত্রণা আর পোহাব না-তা হলে পুলিশকে সরকারের বেআইনি আদেশের ক্ষেত্রে না বলা শিখতে হবে।’

তিনি বলেন, ইউনিফরম বদলানো একটি সস্তা কাজ। এবারই প্রথম ইউনিফরম বদল হয়নি, আগেও অনেকবার বদল হয়েছে। সত্যিকারার্থে পরিবর্তন চাইলে আসল জায়গাতে হিট করতে হবে। পুলিশি কার্যক্রমে পলিটিক্যাল হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। সেটা করতে পারলেই জনগণের প্রত্যাশা পূরণে পেশাদার পুলিশ বাহিনী গড়ে উঠবে।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক ও অপরাধ বিশ্লেষক মুহাম্মদ আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, এর আগেও পুলিশের পোশাক বদল হয়েছিল। কিন্তু চরিত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে এবারের প্রেক্ষাপট অন্যান্য বারের চেয়ে ভিন্ন। এবার ছাত্র-জনতার বিশাল মুভমেন্টের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি হচ্ছে। সংস্কারে কমিশনও গঠন করা হয়েছে। যেহেতু সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, সেটি যদি শেষমেশ বাস্তবায়ন হয় তাহলে পোশাক পরিবর্তন কিছুটা কাজে আসবে।