ভারতের মেঘালয় ও আসামে টানা ভারি বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বাংলাদেশে নতুন করে বন্যার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
ভারতের এই ঢলের পানিতে ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর ও নেত্রকোণা এবং সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলায় বন্যার সৃষ্টি হতে পারে এবং কার্যত পানির নিচে ডুবে যেতে পারে।
এ বিষয়ে কানাডার সাসকাচুয়ান ইউনিভার্সিটির আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ এক ফেসবুকে পোস্টে সতর্ক বার্তা জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২০ মে) দেওয়া এই সতর্কবার্তায় তিনি জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এসব জেলার নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার সৃষ্টি হতে পারে।
পলাশ বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে একটানা মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।’
শেরপুরের বিপদ সবার আগে
এদিকে শেরপুরে গত তিনদিনের ভারি বর্ষণ এবং ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলায় আকস্মিক বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
চেল্লাখালী নদীর পানি ইতোমধ্যেই বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল ১০টায় নদীটির পানি বিপৎসীমার ১০৬ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে, যা সোমবার রাত ১০টায় ছিল ৩৯ সেন্টিমিটারের ওপরে।
অন্যদিকে ভোর থেকে মুষলধারে বৃষ্টি ও উজানের পানির চাপে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পাউবো। এতে আতঙ্কে রয়েছে জেলার ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার নদীপাড়ের মানুষ।
আরও পড়ুন : ভেঙে গেছে ভারতের আত্রাই নদীর বাঁধ, বাংলাদেশের বিপদ
জানা যায়, শেরপুরে গত বছরের অক্টোবরে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাজারও ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র ও ফসলি ক্ষেত। গেলবারের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে না নিতেই এবারও বন্যার আশঙ্কায় আতঙ্কে রয়েছেন নদীপাড়ের হাজারও মানুষ।
গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের ঘোলা পানিতে সেই আশঙ্কা আরও বেড়েছে।
কী করছে সরকারি দপ্তরগুলো
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্রের সতর্কবার্তা পেয়ে কৃষি বিভাগের তরফ থেকে কৃষকদের সচেতন করা হচ্ছে।
‘ইতোমধ্যে জেলার ৮৪ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। বাকি ধানও দ্রুত সময়ের মধ্যে কেটে ফেলতে কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে,’ বলেন তিনি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. তরফদার মাহমুদুর রহমান জানান, আগাম বন্যার আশঙ্কা থাকায় সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
‘ইতোমধ্যে সম্ভাব্য বন্যা কবলিত এলাকার একটি তালিকা তৈরি করে দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে বরাদ্দ পেলে শুকনো খাবার এবং ঢেউটিন ক্রয় করা হবে,’ মন্তব্য করেন জেলাপ্রশাসক ।