১২:০৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

বেগুনি রঙের ধান চাষে তাক লাগিয়ে দিলেন কৃষক রবিউল

  • ঢাকা ডেস্ক
  • সর্বশেষ আপডেট : ০১:৩২:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
  • 18

বেগুনি রঙের ধান আবাদ করে সাড়া ফেলেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার পিড়াসন এলাকার কৃষক রবিউল ইসলাম(৬২)। শুরুতে নতুন ফসল আবাদে মনে কিছুটা সংশয় ছিল তার। এখন জমিতে ফসল দেখে সেই সংশয় কেটে চোখে-মুখে আশার আলো ফুটেছে। এরআগে জেলাটিতে এই ধান আবাদ আর কেউ করেননি।

যেভাবে শুরু

ইউটিউবে বেগুনি রঙের ধান চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হন রবিউল। এরপর অনলাইনে অর্ডার দিয়ে ৩০০ টাকা দরে দুই কেজি বীজ সংগ্রহ করে বাড়ির কাছেই তার নিজের ১২ কাঠা জমিতে চাষ করেছেন।

প্রচলিত ধান গাছের পাতার রঙ সবুজ। কিন্তু তার জমিতে এখন শোভা পাচ্ছে বেগুনি রঙের ধান গাছ। বর্তমানে জমিতে এই ধান গাছে শীষ ফুটেছে। ধান গাছ ও শীষের চেহারা দেখে ভালো ফলনের আশা করছেন তিনি। বিঘাপ্রতি প্রায় ৩০ মন ফলন আশা করছেন রবিউল।

তিনি বলেন, ‘প্রচলিত বোরো আবাদের মতোই এর চাষ পদ্ধতি। জমিতে সেচ, সার দিতে হয়। তবে এ ধানে পোকা বা রোগ-বালাই তুলনামূলকভাবে কম।’

‘ইউটিউবে দেখে আমার এই ধান চাষ করার শখ হয়। তারপর গাইবান্ধা থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে ২ কেজি বীজ সংগ্রহ করে আবাদ করেছি,’ বলেন এই কৃষক।

আরও পড়ুন : ভুট্টা চাষে ভাগ্য বদলাচ্ছে কিশোরগঞ্জের হাওরপাড়ের মানুষের

‘ধানের দিকে তাকিয়ে আমার চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন অনেকে আমার জমিতে এসে ধান দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন। আবার অনেকে এই ধানের বীজ কিনে নেবেন বলে আমাকে বলছেন। আমি ঠিক করেছি ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করব। আমি যদি ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি, তাহলে লাভবান হব বলে আশা করছি।’

এদিকে রাস্তার পাশে চারদিকে বিস্তৃত সবুজ বোরো ধান ক্ষেতের মধ্যে বেগুনি রঙের ধান গাছ দেখে অবাক হচ্ছেন পথচারীরা। একনজর দেখতে আসছেন ধান ক্ষেতে। অনেকেই উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এই ধান আবাদে।

স্থানীয় চাষিরা যা বললেন

সেখানে কথা হয় উপজেলার রহনপুর, দসিমোনি কাঁঠাল এলাকার মনিরুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, ‘রোজ এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করি। ধানের গাছ যখন বড় হয়, তখন থেকে দেখে আসছি গাছের পাতার রঙ বেগুনি।’

‘এটা দেখে আমি খুবই অবাক হয়েছি। বর্তমানে ধানের শীষ বের হয়েছে। দেখে বেশ ভালো লাগছে। শীষ দেখে মনে হচ্ছে ফলনও ভালো হবে। আমি এই ধান যিনি লাগিয়েছেন রবিউল ভাই তাকে বলেছি আমি এর বীজ কিনব। আমার জমিতে আমি চাষ করব এমনটাই ইচ্ছা আছে।’

সেখানে কথা হয় চৌডালা উত্তর হাউস নগর এলাকার গোলাম মোস্তফার সাথে। তিনি বলেন, ‘এই রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় দেখতে পেলাম বেগুনি রঙের ধানের গাছ। আমি জমিতে এসে কাছ থেকে দেখে আমার চোখ জুড়িয়ে গেলো। ধান গাছ তো সাধারণত সবুজ রঙের হয়। কিন্তু এটা বেগুনি রঙের। ভিন্ন প্রকৃতির। ধানের শিষও বেশ ভালো ফুটেছে। আশা করা যায়, ফলন ভালো হবে।’

সাইফুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘আমি এই রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করি। ধানটা দূর থেকে দেখি। কিন্তু কাছে এসে দেখা হয় না। আজকে দেখার জন্য জমিতে এলাম। এতদিন ধানের গাছ দেখেছি সবুজ কিন্তু এখন দেখছি বেগুনি রঙের। ধানটা যদি ফলন ভালো হয়, তাহলে এর বীজ কিনে চাষ করবো।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. ইয়াছিন আলী বলেন, ‘আমাদের দেশে বছরে তিনটি মৌসুমে ধান উৎপাদন হয় এবং এই ধানগুলোর মধ্যে কিছু স্থানীয় জাত, কিছু উচ্চফলনশীল জাত এবং কিছু হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করা হয়।’

‘এই ধান গাছগুলো সাধারণত সবুজ রঙের হয়। তবে এ বছরে আমাদের গোমস্তপুর উপজেলার পিড়াসন এলাকার এক কৃষক নিজ উদ্যোগে কিছু ধান বীজ সংগ্রহ করে তার জমিতে চারা রোপন করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘ধান গাছের রঙ বেগুনি। এই ধান থেকে যে চাল হবে, সেটি যদি বেগুনি রঙের হয়, পুষ্টি গুণসম্পন্ন হবে। ধান লাগানোর পর থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এটি মনিটরিং করা হচ্ছে এবং কৃষককে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। যদি ফলন সন্তোষজনক হয়, তাহলে পরবর্তিতে এই জেলায় এ ধানের চাষ সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সেভ করুন

বেগুনি রঙের ধান চাষে তাক লাগিয়ে দিলেন কৃষক রবিউল

সর্বশেষ আপডেট : ০১:৩২:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

বেগুনি রঙের ধান আবাদ করে সাড়া ফেলেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার পিড়াসন এলাকার কৃষক রবিউল ইসলাম(৬২)। শুরুতে নতুন ফসল আবাদে মনে কিছুটা সংশয় ছিল তার। এখন জমিতে ফসল দেখে সেই সংশয় কেটে চোখে-মুখে আশার আলো ফুটেছে। এরআগে জেলাটিতে এই ধান আবাদ আর কেউ করেননি।

যেভাবে শুরু

ইউটিউবে বেগুনি রঙের ধান চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হন রবিউল। এরপর অনলাইনে অর্ডার দিয়ে ৩০০ টাকা দরে দুই কেজি বীজ সংগ্রহ করে বাড়ির কাছেই তার নিজের ১২ কাঠা জমিতে চাষ করেছেন।

প্রচলিত ধান গাছের পাতার রঙ সবুজ। কিন্তু তার জমিতে এখন শোভা পাচ্ছে বেগুনি রঙের ধান গাছ। বর্তমানে জমিতে এই ধান গাছে শীষ ফুটেছে। ধান গাছ ও শীষের চেহারা দেখে ভালো ফলনের আশা করছেন তিনি। বিঘাপ্রতি প্রায় ৩০ মন ফলন আশা করছেন রবিউল।

তিনি বলেন, ‘প্রচলিত বোরো আবাদের মতোই এর চাষ পদ্ধতি। জমিতে সেচ, সার দিতে হয়। তবে এ ধানে পোকা বা রোগ-বালাই তুলনামূলকভাবে কম।’

‘ইউটিউবে দেখে আমার এই ধান চাষ করার শখ হয়। তারপর গাইবান্ধা থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে ২ কেজি বীজ সংগ্রহ করে আবাদ করেছি,’ বলেন এই কৃষক।

আরও পড়ুন : ভুট্টা চাষে ভাগ্য বদলাচ্ছে কিশোরগঞ্জের হাওরপাড়ের মানুষের

‘ধানের দিকে তাকিয়ে আমার চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন অনেকে আমার জমিতে এসে ধান দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন। আবার অনেকে এই ধানের বীজ কিনে নেবেন বলে আমাকে বলছেন। আমি ঠিক করেছি ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করব। আমি যদি ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি, তাহলে লাভবান হব বলে আশা করছি।’

এদিকে রাস্তার পাশে চারদিকে বিস্তৃত সবুজ বোরো ধান ক্ষেতের মধ্যে বেগুনি রঙের ধান গাছ দেখে অবাক হচ্ছেন পথচারীরা। একনজর দেখতে আসছেন ধান ক্ষেতে। অনেকেই উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এই ধান আবাদে।

স্থানীয় চাষিরা যা বললেন

সেখানে কথা হয় উপজেলার রহনপুর, দসিমোনি কাঁঠাল এলাকার মনিরুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, ‘রোজ এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করি। ধানের গাছ যখন বড় হয়, তখন থেকে দেখে আসছি গাছের পাতার রঙ বেগুনি।’

‘এটা দেখে আমি খুবই অবাক হয়েছি। বর্তমানে ধানের শীষ বের হয়েছে। দেখে বেশ ভালো লাগছে। শীষ দেখে মনে হচ্ছে ফলনও ভালো হবে। আমি এই ধান যিনি লাগিয়েছেন রবিউল ভাই তাকে বলেছি আমি এর বীজ কিনব। আমার জমিতে আমি চাষ করব এমনটাই ইচ্ছা আছে।’

সেখানে কথা হয় চৌডালা উত্তর হাউস নগর এলাকার গোলাম মোস্তফার সাথে। তিনি বলেন, ‘এই রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় দেখতে পেলাম বেগুনি রঙের ধানের গাছ। আমি জমিতে এসে কাছ থেকে দেখে আমার চোখ জুড়িয়ে গেলো। ধান গাছ তো সাধারণত সবুজ রঙের হয়। কিন্তু এটা বেগুনি রঙের। ভিন্ন প্রকৃতির। ধানের শিষও বেশ ভালো ফুটেছে। আশা করা যায়, ফলন ভালো হবে।’

সাইফুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘আমি এই রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করি। ধানটা দূর থেকে দেখি। কিন্তু কাছে এসে দেখা হয় না। আজকে দেখার জন্য জমিতে এলাম। এতদিন ধানের গাছ দেখেছি সবুজ কিন্তু এখন দেখছি বেগুনি রঙের। ধানটা যদি ফলন ভালো হয়, তাহলে এর বীজ কিনে চাষ করবো।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. ইয়াছিন আলী বলেন, ‘আমাদের দেশে বছরে তিনটি মৌসুমে ধান উৎপাদন হয় এবং এই ধানগুলোর মধ্যে কিছু স্থানীয় জাত, কিছু উচ্চফলনশীল জাত এবং কিছু হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করা হয়।’

‘এই ধান গাছগুলো সাধারণত সবুজ রঙের হয়। তবে এ বছরে আমাদের গোমস্তপুর উপজেলার পিড়াসন এলাকার এক কৃষক নিজ উদ্যোগে কিছু ধান বীজ সংগ্রহ করে তার জমিতে চারা রোপন করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘ধান গাছের রঙ বেগুনি। এই ধান থেকে যে চাল হবে, সেটি যদি বেগুনি রঙের হয়, পুষ্টি গুণসম্পন্ন হবে। ধান লাগানোর পর থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এটি মনিটরিং করা হচ্ছে এবং কৃষককে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। যদি ফলন সন্তোষজনক হয়, তাহলে পরবর্তিতে এই জেলায় এ ধানের চাষ সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’