০৯:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

লন্ডনে সালমান এফ রহমানের ছেলের সম্পত্তি জব্দ

  • ঢাকা ডেস্ক
  • সর্বশেষ আপডেট : ১১:২৫:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫
  • 33

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান এফ রহমানের লন্ডনের দুটি অ্যাপার্টমেন্ট জব্দের নির্দেশ পেয়েছে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ)। শেখ হাসিনার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষাপটে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

শায়ানের ১২৫ কোটি টাকা মূল্যের দুটি অ্যাপার্টমেন্ট জব্দের নির্দেশ

জব্দ হওয়া অ্যাপার্টমেন্ট দুটির মধ্যে একটি অবস্থিত লন্ডনের অভিজাত ১৭ গ্রোসভেনর স্কয়ার-এ, যেটি ২০১০ সালে প্রায় ৬৫ লাখ পাউন্ড ( বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০৬ কোটির বেশি টাকা) দিয়ে কেনা হয়েছিল। অন্যটি উত্তর লন্ডনের গ্রেশাম গার্ডেনস এলাকায়, যা ১২ লাখ পাউন্ডে (সাড়ে ১৯ কোটির বেশি টাকা) গত বছর কিনেছিলেন শায়ান। খবর ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের

যুক্তরাজ্যের নির্বাচনবিষয়ক নথি অনুযায়ী, শেখ হাসিনার বোন এবং সাবেক ব্রিটিশ সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের মা শেখ রেহানা গ্রেশাম গার্ডেনসের অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করেছেন। তবে তিনি বর্তমানে ওই ফ্ল্যাটে রয়েছেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এনসিএ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘একটি চলমান ফৌজদারি তদন্তের অংশ হিসেবে ১৭ গ্রোসভেনর স্কয়ার ও গ্রেশাম গার্ডেনসের অ্যাপার্টমেন্ট দুটি জব্দের (ফ্রিজিং অর্ডার) আদেশ পেয়েছি আমরা। এই মুহূর্তে আমরা এর চেয়ে বেশি কিছু জানাতে পারছি না।’

ফ্রিজিং অর্ডার হচ্ছে আদালতের একটি আদেশ, যা কোনো সম্পত্তি বিক্রয় বা ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। নথি অনুসারে, অ্যাপার্টমেন্ট দুটি আইল অফ ম্যান-এ নিবন্ধিত অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা হয়।

আরও পড়ুন : প‌রোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তা‌রের ক্ষমতা পে‌লেন ট্রাইব্যুনা‌লের প্রসি‌কিউটর, তদন্তকারী কর্মকর্তারা

বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন,‘সালমান এফ রহমান ও শায়ান এফ রহমান অর্থ আত্মসাতের তদন্তে সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন।’

তবে শায়ান রহমানের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের মক্কেল সব ধরনের অনিয়মের অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করেছেন। যুক্তরাজ্যে যদি কোনো তদন্ত হয়, তবে তিনি তাতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে, যেখানে শত শত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হচ্ছে। আমরা আশা করি, যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষ এটি বিবেচনায় নেবে।’

এ বিষয়ে শেখ রেহানা বা সালমান এফ রহমানের পক্ষ থেকে এখনো কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

২০০৯ থেকে টানা তৃতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী থাকা শেখ হাসিনা ছাত্র আন্দোলনের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন।

তিনি দাবি করেন, পুলিশ, গণমাধ্যম ও বিচারব্যবস্থা সহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আওয়ামী লীগের দখলে ছিল—এখন তিনি সেগুলোর সংস্কারে কাজ করছেন।

বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে কিছু ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ ও সম্পদ জব্দ করেছে

দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে কিছু ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ ও সম্পদ জব্দ করেছে এবং যুক্তরাজ্যসহ বিদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে।

চলতি মে মাসেই ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করে। দলের সমর্থকদের অভিযোগ, এই অভিযান আসলে রাজনৈতিক প্রতিশোধ। এই দুর্নীতিবিরোধী উদ্যোগে শেখ হাসিনার ভাগনি, সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক-এর নামও উঠে আসে। যদিও তিনি কোনো অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, তবে গত জানুয়ারিতে ব্রিটিশ সরকারের ‘সিটি মিনিস্টার’ পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেন সুনাম রক্ষার স্বার্থে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সেভ করুন

লন্ডনে সালমান এফ রহমানের ছেলের সম্পত্তি জব্দ

সর্বশেষ আপডেট : ১১:২৫:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান এফ রহমানের লন্ডনের দুটি অ্যাপার্টমেন্ট জব্দের নির্দেশ পেয়েছে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ)। শেখ হাসিনার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষাপটে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

শায়ানের ১২৫ কোটি টাকা মূল্যের দুটি অ্যাপার্টমেন্ট জব্দের নির্দেশ

জব্দ হওয়া অ্যাপার্টমেন্ট দুটির মধ্যে একটি অবস্থিত লন্ডনের অভিজাত ১৭ গ্রোসভেনর স্কয়ার-এ, যেটি ২০১০ সালে প্রায় ৬৫ লাখ পাউন্ড ( বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০৬ কোটির বেশি টাকা) দিয়ে কেনা হয়েছিল। অন্যটি উত্তর লন্ডনের গ্রেশাম গার্ডেনস এলাকায়, যা ১২ লাখ পাউন্ডে (সাড়ে ১৯ কোটির বেশি টাকা) গত বছর কিনেছিলেন শায়ান। খবর ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের

যুক্তরাজ্যের নির্বাচনবিষয়ক নথি অনুযায়ী, শেখ হাসিনার বোন এবং সাবেক ব্রিটিশ সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের মা শেখ রেহানা গ্রেশাম গার্ডেনসের অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করেছেন। তবে তিনি বর্তমানে ওই ফ্ল্যাটে রয়েছেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এনসিএ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘একটি চলমান ফৌজদারি তদন্তের অংশ হিসেবে ১৭ গ্রোসভেনর স্কয়ার ও গ্রেশাম গার্ডেনসের অ্যাপার্টমেন্ট দুটি জব্দের (ফ্রিজিং অর্ডার) আদেশ পেয়েছি আমরা। এই মুহূর্তে আমরা এর চেয়ে বেশি কিছু জানাতে পারছি না।’

ফ্রিজিং অর্ডার হচ্ছে আদালতের একটি আদেশ, যা কোনো সম্পত্তি বিক্রয় বা ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। নথি অনুসারে, অ্যাপার্টমেন্ট দুটি আইল অফ ম্যান-এ নিবন্ধিত অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা হয়।

আরও পড়ুন : প‌রোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তা‌রের ক্ষমতা পে‌লেন ট্রাইব্যুনা‌লের প্রসি‌কিউটর, তদন্তকারী কর্মকর্তারা

বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন,‘সালমান এফ রহমান ও শায়ান এফ রহমান অর্থ আত্মসাতের তদন্তে সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন।’

তবে শায়ান রহমানের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের মক্কেল সব ধরনের অনিয়মের অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করেছেন। যুক্তরাজ্যে যদি কোনো তদন্ত হয়, তবে তিনি তাতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে, যেখানে শত শত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হচ্ছে। আমরা আশা করি, যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষ এটি বিবেচনায় নেবে।’

এ বিষয়ে শেখ রেহানা বা সালমান এফ রহমানের পক্ষ থেকে এখনো কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

২০০৯ থেকে টানা তৃতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী থাকা শেখ হাসিনা ছাত্র আন্দোলনের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন।

তিনি দাবি করেন, পুলিশ, গণমাধ্যম ও বিচারব্যবস্থা সহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আওয়ামী লীগের দখলে ছিল—এখন তিনি সেগুলোর সংস্কারে কাজ করছেন।

বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে কিছু ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ ও সম্পদ জব্দ করেছে

দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে কিছু ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ ও সম্পদ জব্দ করেছে এবং যুক্তরাজ্যসহ বিদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে।

চলতি মে মাসেই ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করে। দলের সমর্থকদের অভিযোগ, এই অভিযান আসলে রাজনৈতিক প্রতিশোধ। এই দুর্নীতিবিরোধী উদ্যোগে শেখ হাসিনার ভাগনি, সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক-এর নামও উঠে আসে। যদিও তিনি কোনো অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, তবে গত জানুয়ারিতে ব্রিটিশ সরকারের ‘সিটি মিনিস্টার’ পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেন সুনাম রক্ষার স্বার্থে।