বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী সাইফুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্যের সম্পত্তি জব্দ করেছে দেশটির জাতীয় অপরাধ সংস্থা (এনসিএ)। বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। খবর আল জাজিরার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী বর্তমানে মানি লন্ডারিং (অর্থপাচার) মামলায় বাংলাদেশে তদন্তাধীন রয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও এখন নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন।
সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামানের সম্পত্তি জব্দ করল যুক্তরাজ্য
এক বিবৃতিতে এনসিএ জানায়, তারা একটি চলমান বেসামরিক তদন্তের অংশ হিসেবে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বেশ কিছু সম্পত্তি ফ্রিজ (অর্থাৎ বিক্রয় বা হস্তান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা) করেছে। এর ফলে তিনি এসব সম্পদ বিক্রি করতে পারবেন না। এই পদক্ষেপের সময় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস লন্ডন সফরে ছিলেন।
এর আগে গত বছরের অক্টোবরে The Minister’s Millions শিরোনামে সম্প্রচারিত আল জাজিরার একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানানো হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্যে ৩৫০টির বেশি সম্পত্তির মালিক। সেগুলোর মধ্যে লন্ডনের অভিজাত এলাকা সেন্ট জনস উডে একটি বিলাসবহুল বাসভবন রয়েছে, যার মূল্য ১ কোটি ১০ লাখ পাউন্ড (প্রায় ১৪.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। এই বাসায় আল জাজিরার গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত সাক্ষাৎকারে চৌধুরী নিজের সম্পদের বিবরণ দেন এবং দামি ব্র্যান্ডের জুতা ও পোশাকের প্রতি আগ্রহের কথা জানান।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি শেখ হাসিনার ছেলের মতো। তিনি জানেন আমি এখানে ব্যবসা করি।’
চট্টগ্রামের একটি প্রভাবশালী পরিবার থেকে উঠে আসা চৌধুরী কীভাবে বাংলাদেশি আইনে বার্ষিক সর্বোচ্চ ১২ হাজার ডলার বৈদেশিক লেনদেন সীমার মধ্যে থেকে ৫০ কোটি ডলারের বেশি বিদেশে সম্পদ গড়ে তুলেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। লন্ডন, দুবাই এবং নিউ ইয়র্কে তার যে সম্পদ রয়েছে, সেগুলোর কোনো ঘোষণা তিনি বাংলাদেশের কর দাখিলে দেননি।
২০২৪ সালের আগস্টে নিরাপত্তা বাহিনীর দমন-পীড়নে ছাত্র আন্দোলনে শত শত মানুষ নিহত হওয়ার পর শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এরপর বাংলাদেশের নতুন প্রশাসন তার সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত শুরু করে।
লন্ডন, দুবাই এবং নিউইয়র্কে ৫০ কোটিরও বেশি ডলারের সম্পদ কেনেন
প্রসঙ্গত, সাইফুজ্জামান চৌধুরী যখন মন্ত্রী ছিলেন, তখনই তিনি লন্ডন, দুবাই এবং নিউইয়র্কে ৫০ কোটিরও বেশি ডলারের সম্পদ কেনেন বলে দাবি করেছে আই-ইউনিট। অথচ বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে তিনি বছরে মাত্র ১২ হাজার ডলার বৈধভাবে বিদেশে নিতে পারতেন। এই বিপুল সম্পদ তিনি করদাতার বিবরণীতে কখনোই ঘোষণা করেননি।
তবে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, তার বিদেশি সম্পদ দীর্ঘদিন ধরে বৈধ ব্যবসা থেকেই অর্জিত এবং বর্তমানে তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।
যুক্তরাজ্যে সম্পদ জব্দের ঘটনাটি শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগকে আরও দৃঢ় করছে এবং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সাবেক ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে।