জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বলে মনে করে বিএনপি।
মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেছে, জুলাই-ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এর বিকল্প নেই।
তাই, বিএনপি একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানায়। এই সর্বোচ্চ জনআকাঙ্খাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানতম এজেন্ডা হওয়া উচিত বলে জনগণ মনে করে। এর অন্যথা হলে জনগণের দল হিসেবে বিএনপি’র পক্ষে এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এছাড়ও উপস্থিত ছিলেন- মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও সালাহউদ্দিন আহমেদ।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করেন। একই দিনে আরও দুইটি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরবর্তীতে আমাদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছি। পর দিন আরও ২০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেছেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার আলোচনার প্রসঙ্গে তার প্রেস সচিবের মাধ্যমে সরকারের যে বক্তব্য পাওয়া গেছে— তাতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনোা রোডম্যাপের ঘোষণা না থাকায় আমরা হতাশ হয়েছি। বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল কোন সময়েই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি এবং এখনও চায় না। কিন্তু আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করে এসেছি।
যেহেতু, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, তাই সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দু’টোই একইসঙ্গে চলতে পারে বলে মনে করে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তির এবং ব্যক্তির অর্থাৎ দল এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।
তিনি বলেন, গত শনিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভা শেষে উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে যে বক্তব্য জাতির সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে তা অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর। উপদেষ্টা পরিষদের দায়িত্ব পালনে আমরা প্রথম থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করে আসছি। সরকার পরিচালনায় নিরপেক্ষতার ঘাটতির কারণে এবং দুর্বলতার কারণে জনমনে সংশয় ও সন্দেহের উদয় হওয়া স্বাভাবিক। বিভিন্ন মহলের অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি-দাওয়া এবং এখতিয়ার বহির্ভূত বক্তব্য সরকারের স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার যে অভিযোগ সরকারের পক্ষ থেকে উত্থাপন করা হয়েছে, সেটা মূলত সরকারের নিজস্ব অর্জন।
উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে সরকারের উপর দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হচ্ছে”। আমরা বলতে চাই, যথাশীঘ্র একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমেই পরাজিত শক্তির ইন্ধন এবং বিদেশী ষড়যন্ত্র বন্ধ করা সম্ভব। সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য অবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট রোড ম্যাপ প্রদান করা জরুরি, এর কোনো বিকল্প নেই।
দেশকে স্থিতিশীল রাখতে নির্বাচন জরুরি
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আরো বলেন, দেশকে স্থিতিশীল রাখতে, নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে এবং চিরতরে এদেশে স্বৈরাচারের আগমন প্রতিহত করতে ফ্যাসিবাদ বিরোধী বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। জুলাই ছাত্র- গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা এবং জনপ্রত্যাশাকে ধারণ করে অতিশীঘ্র রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করা অতি জরুরি।
এই লক্ষ্যে আমরা সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছি। সরকারের স্বকীয়তা, সংস্কার উদ্যোগ, বিচার প্রক্রিয়া, সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কোন কর্মকাণ্ডকে আমরা সকল সময়ে নিরুৎসাহিত করি এবং প্রতিরোধ করার অঙ্গীকারাবদ্ধ। অথচ উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে কোন কোন মহল তাদের উপরে অর্পিত দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তুলছে মর্মে একটি বিমূর্ত অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।
তিনি বলেন, জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সকল শ্রেণি-পেশার শক্তির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না হয়, যাতে ঐক্যকে আরও শক্তিশালী করা যায় সেই জন্য সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা এবং চরিত্র বজায় রাখার স্বার্থে আমরা বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণ চেয়েছি। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই এদেশের জনগণ রক্ত দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছে।
অথচ সরকারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে জনমনে এ বিষয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে ইশরাক হোসেনের পক্ষে আদালতের রায় অনুযায়ী গেজেট নোটিফিকেশন হয়েছে, অথচ সরকার আজ পর্যন্ত তার শপথ গ্রহণের জন্য কোন ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা আশা করি, কাল বিলম্ব না করে সরকার তার শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা নিবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি রোধকল্পে, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের মধ্যে রাখতে, বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্যে গতিশীলতা আনায়নের লক্ষ্যে সরকার ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন, এই প্রত্যাশা আমাদের সকলের।