‘আমি কারও ফোন ধরতে বাধ্য না। আমাকে চিঠি দিতে হবে। আমরা প্রজাতন্ত্রের এমন চাকর যে, মালিককে জেলে ভরে দিতে পারি।’ কালের কণ্ঠের পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি এমরান হাসান সোহেল ও খবরপত্রের বাউফল প্রতিনিধি এইচএম বাবলুকে এভাবেই হুমকি দিয়েছেন বলে বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (১৯ মে) বেলা ১১টার দিকে পৌর সদরের বাউফল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে বসে তিনি ওই হুমকি দেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আমি কারও ফোন ধরাতে বাধ্য না। আমাকে চিঠি দিতে হবে।’ ইউএনও আমিনুল ইসলামের এমন আচরণে হতবাক হয়েছেন উপস্থিত সবাই।
কালের কণ্ঠের সাতক্ষীরার তালা উপজেলা প্রতিনিধির পর এবার বাউফলে এ দুই সাংবাদিককে ইউএনওর হুমকিতে বিরূপ সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। জানা গেছে, ওই বিদ্যালয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন পটুয়াখালী জেলা কার্যালয় ও বাউফল দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ কমিটির আয়োজন ও বাস্তবায়নে স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতার ফাইনাল রাউন্ডের দিনক্ষণ ধার্য ছিল সোমবার। কালের কণ্ঠের পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি এমরান হাসান সোহেল ওই কমিটির সভাপতি।
ইউএনওর হুমকি
এমরান হাসান সোহেল জানান, বৃহস্পতিবার (১৫ মে) এ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য তার কার্যালয়ে প্রথম যাওয়া হয়। কিন্তু অফিসে ছিলেন না ইউএনও। এরপর শনি ও রোববার পুনরায় তাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রতিরোধ কমিটির লোকজন তার কার্যালয়ে গেলে তখনও তাকে পাওয়া যায়নি। কমিটির সভাপতি তাকে ফোন করলেও ফোন রিসিভ করেননি ইউএনও আমিনুল ইসলাম।
সর্বশেষ রোববার সন্ধ্যার পর তাকে ফোন দিলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এদিকে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহানারা বেগম তাকে আমন্ত্রণ জানালে তিনি দুপুর ১২টার সময় বিতর্ক প্রতিযোগিতার শেষ পর্বের সময় ওই বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন।
এ সময় তাকে আমন্ত্রণ না দেওয়ার কৈফিয়ত তলব করেন ‘আমার প্রতিরোধ কমিটি’র সভাপতি এমরান হাসান সোহেলের কাছে। এ সময় তাকে দাওয়াত না দেওয়ার কৈফিয়তের জবাবে প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি বলেন, ‘আপনাকে একাধিকবার কার্যালয়ে গিয়ে পাইনি। এমনকি আপনাকে তিন দিন বিভিন্ন সময় ফোন করেছি আপনি রিসিভ করেননি।’ এ কথা শুনে হঠাৎ করে ইউএনও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন।
আমি প্রজাতন্ত্রের এমন চাকর, মালিককেও শাস্তি দিতে পারি
এ সময় ইউএনও বলেন, আপনারা একটা অ্যারেজমেন্ট করতেছেন ইউএনও জানে না, আপনারা কিসেরে আয়োজন করতেছেন। ইউএনওকে অবহিত না করে আপনাকে এ আয়োজন করার এখতিয়ার কে দিয়েছে?
এ সময় আমি (দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এমরান হাসান সোহেল) বলেছি, ‘আপনাকে আমন্ত্রণের জন্য আপনার কমপ্লেক্সে তিন দিন যাওয়া হয়েছে। কিন্তু আপনাকে পাইনি।’ জবাবে ইউএনও বলেন, ‘উপজেলা কমপ্লেক্সে কে গেছে? কমপ্লেক্সে তো কাউয়া-বক থাকে। আপনি আমার বাংলোতে গেলেন না কেন? আমার বাংলো একটা অফিস।’
এমরান হাসান সোহেল আরও বলেন, ‘আমি বলেছি, আপনার বাংলোতে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। এর জাবাবে ইউএনও বলেন, ‘বাংলোতে যখন অ্যালাউ করব তখন ঢুকবেন।’
পরে ইউএনও এমরান হাসানকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি হয়ে মনে করছেন রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি হয়ে গেছেন। আমি আপনার ফোন ধরতে বাধ্য না। আপনি আপনার ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ফোন দিলে আমি ধরব কেন?’
আরও পড়ুন : সান্ডা ভেবে যা ধরলেন যুবক
এ সময় এমরান বলেন, ‘আপনি (ইউএনও) ফোনই ধরলেন না, তা হলে ব্যক্তিগত স্বার্থ, নাকি রাষ্ট্রীয় কোনো কাজ বুঝলেন কীভাবে? আপনি একজন কৃষকের ফোনও ধরতে বাধ্য।’ এরপর ইউএনও আমিনুল বলেন, ‘আমি প্রজাতন্ত্রের এমন চাকর, মালিককেও শাস্তি দিতে পারি।’
তখন সভাপতি সোহেল বলেন, ‘ক্ষমতা আছে, আপনি দেন শাস্তি।’
পরে ইউএনও খবরপত্রের সাংবাদিক এইচ বাবলুকে তার পিয়ন দিয়ে ভয়ভীতিও দেখান। ওই সাংবাদিককে দেখা করে সরি বলতে চাপ প্রয়োগ করেন ইউএনওর গাড়িচালক।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার কাছে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য এখনো আসেনি, তথ্য পেলে মন্তব্য করতে পারব।’