০৮:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ মিলে গেলে সন্তান নেওয়ার আগে যা জানা দরকার

  • ঢাকা ডেস্ক
  • সর্বশেষ আপডেট : ০৬:৪০:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
  • 26

জীবনে চলার পথে প্রতিটি মানুষের রক্তের গ্রুপ জানা খুবই জরুরি। ঠিক কখন কোন প্রয়োজনে কার কাছ থেকে রক্ত নেওয়ার প্রয়োজন হয় বা কাকে রক্ত দিতে হয়, তা আগে থেকে অনুমান করা যায় না। সাধারণত বিভিন্ন অ্যান্টিজেনের উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে মানুষের রক্তের গ্রুপ আলাদা হয়ে থাকে।

গ্রুপিং পদ্ধতিতে রক্তের গ্রুপকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন এ, বি, এবি এবং ও। তবে সম্প্রতি অনেক অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন রয়েছে, স্বামী ও স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে কোনো সমস্যা হবে কিনা। এ নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে বিস্তর যুক্তিতর্ক দেখা যায় সাধারণ মানুষের।

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে কী কোনো সমস্যা হয়? বিষয়টি পরিষ্কার করলেন চিকিৎসকরা।

স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে কী কোনো সমস্যা হয়?

চিকিৎসকরা বলছেন, রক্তের গ্রুপ নির্ভর করে দুটি ফ্যাক্টরের ওপর। একটি হলো এবিও ফ্যাক্টর, আরেকটি হচ্ছে জয ফ্যাক্টর। এদের ওপর ভিত্তি করে আমাদের রক্তের গ্রুপ নির্ধারিত হয়।

জানা যায়, আরএইচ অ্যান্টিজেনের উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে রক্তের গ্রুপ হতে পারে পজিটিভ অথবা নেগেটিভ। এ ক্ষেত্রে যা ঘটতে পারে—

স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হলে কী হয়: এ অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হওয়া সন্তানের রক্তের গ্রুপও নেগেটিভ হয়ে থাকে। তবে এতে কোনো ধরনের সমস্যা হয় না।

স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হলে কী হয়: গর্ভস্থ সন্তানের রক্তের গ্রুপও তখন পজিটিভ হয়ে থাকে। এতে মায়ের সঙ্গে ভূমিষ্ঠ সন্তানের রক্তের গ্রুপে সামঞ্জস্য থাকে এবং তারা নিরাপদ থাকে।

আরও পড়ুন : বয়স বাড়লেও যৌবন ধরে রাখার ১৫টি সেরা ও সহজ নিয়ম

স্বামীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ ও স্ত্রীর পজিটিভ হলে কী হয়: গর্ভস্থ সন্তানের রক্তের গ্রুপ পজিটিভ বা নেগেটিভ বা যেকোনোটাই হতে পারে। তবে মায়ের রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হওয়ায় মা বা সন্তান, কারোরই ক্ষতির কোনো শঙ্কা নেই।

স্বামীর রক্তের গ্রুপ পজিটিভ ও স্ত্রীর নেগেটিভ হলে কী হয়: এমনটা হলে গর্ভস্থ সন্তানের রক্তের গ্রুপ পজিটিভও হতে পারে অথবা নেগেটিভও হতে পারে। যদি পজিটিভ হয়, সে ক্ষেত্রে সন্তানের শরীর থেকে কিছু পজিটিভ লোহিত রক্তকণিকা মায়ের শরীরে চলে আসে এবং অ্যান্টিবডি তৈরি করে। সাধারণত প্রথম বাচ্চার কোনো সমস্যা হয় না। তবে পরবর্তী সময়ে মা যদি অন্তঃসত্ত্বা হন এবং গর্ভস্থ সন্তান পজিটিভ রক্তের হয়, তাহলে এই অ্যান্টিবডি সন্তানের লোহিত রক্তকণিকাগুলোকে ধ্বংস করে।

‘ফলে গর্ভস্থ শিশুর শরীরে রক্তশূন্যতা ও জন্ডিস দেখা দেয়। রক্তশূন্যতার মাত্রা তীব্রতর হলে লিভার ও হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা ব্যাহত হয় এবং শিশুর শরীরে পানি জমতে থাকে। তখন গর্ভস্থ শিশুর শরীর ফুলে যায়, যাকে বলে হাইড্রপস ফেটালিস। এ অবস্থায় সঠিক চিকিৎসা না হলে শিশু পেটের মধ্যে মারা যেতে পারে। এ ঘটনা পরবর্তী সব পজিটিভ রক্তধারী শিশুর ক্ষেত্রেই ঘটতে থাকে। তবে সন্তান যদি নেগেটিভ গ্রুপের হয়, তাহলে সাধারণত কোনো সমস্যা হয় না।’

রক্তের গ্রুপ এক হলে প্রতিরোধ ও চিকিৎসা কী

১. অন্তঃসত্ত্বা প্রত্যেক মায়ের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করতে হবে। সম্ভব হলে সন্তান ধারণের পরিকল্পনা করার সময়ই করে নিন।

২. অন্তঃসত্ত্বা মায়ের রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হলে অবশ্যই স্বামীর রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করতে হবে।

৩. স্বামীর রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হলে মায়ের রক্তে আগেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না, দেখার জন্য আরএইচ অ্যান্টিবডি নির্ণয় করতে হবে।

৪. মায়ের শরীরে আরএইচ অ্যান্টিবডি অনুপস্থিত থাকলে ২৮ সপ্তাহে মাকে অ্যান্টিবডি টিকা দিতে হবে এবং সন্তানের জন্মের পর তার রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করতে হবে। সন্তানের রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পুনরায় মাকে টিকা দিতে হবে।

৫. যদি মায়ের শরীরে আগে থেকেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে থাকে, তাহলে আর টিকার কোনো ভূমিকা নেই। ওই মাকে অবশ্যই উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অন্তঃসত্ত্বা হিসেবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সেভ করুন

স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ মিলে গেলে সন্তান নেওয়ার আগে যা জানা দরকার

সর্বশেষ আপডেট : ০৬:৪০:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

জীবনে চলার পথে প্রতিটি মানুষের রক্তের গ্রুপ জানা খুবই জরুরি। ঠিক কখন কোন প্রয়োজনে কার কাছ থেকে রক্ত নেওয়ার প্রয়োজন হয় বা কাকে রক্ত দিতে হয়, তা আগে থেকে অনুমান করা যায় না। সাধারণত বিভিন্ন অ্যান্টিজেনের উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে মানুষের রক্তের গ্রুপ আলাদা হয়ে থাকে।

গ্রুপিং পদ্ধতিতে রক্তের গ্রুপকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন এ, বি, এবি এবং ও। তবে সম্প্রতি অনেক অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন রয়েছে, স্বামী ও স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে কোনো সমস্যা হবে কিনা। এ নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে বিস্তর যুক্তিতর্ক দেখা যায় সাধারণ মানুষের।

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে কী কোনো সমস্যা হয়? বিষয়টি পরিষ্কার করলেন চিকিৎসকরা।

স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে কী কোনো সমস্যা হয়?

চিকিৎসকরা বলছেন, রক্তের গ্রুপ নির্ভর করে দুটি ফ্যাক্টরের ওপর। একটি হলো এবিও ফ্যাক্টর, আরেকটি হচ্ছে জয ফ্যাক্টর। এদের ওপর ভিত্তি করে আমাদের রক্তের গ্রুপ নির্ধারিত হয়।

জানা যায়, আরএইচ অ্যান্টিজেনের উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে রক্তের গ্রুপ হতে পারে পজিটিভ অথবা নেগেটিভ। এ ক্ষেত্রে যা ঘটতে পারে—

স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হলে কী হয়: এ অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হওয়া সন্তানের রক্তের গ্রুপও নেগেটিভ হয়ে থাকে। তবে এতে কোনো ধরনের সমস্যা হয় না।

স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হলে কী হয়: গর্ভস্থ সন্তানের রক্তের গ্রুপও তখন পজিটিভ হয়ে থাকে। এতে মায়ের সঙ্গে ভূমিষ্ঠ সন্তানের রক্তের গ্রুপে সামঞ্জস্য থাকে এবং তারা নিরাপদ থাকে।

আরও পড়ুন : বয়স বাড়লেও যৌবন ধরে রাখার ১৫টি সেরা ও সহজ নিয়ম

স্বামীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ ও স্ত্রীর পজিটিভ হলে কী হয়: গর্ভস্থ সন্তানের রক্তের গ্রুপ পজিটিভ বা নেগেটিভ বা যেকোনোটাই হতে পারে। তবে মায়ের রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হওয়ায় মা বা সন্তান, কারোরই ক্ষতির কোনো শঙ্কা নেই।

স্বামীর রক্তের গ্রুপ পজিটিভ ও স্ত্রীর নেগেটিভ হলে কী হয়: এমনটা হলে গর্ভস্থ সন্তানের রক্তের গ্রুপ পজিটিভও হতে পারে অথবা নেগেটিভও হতে পারে। যদি পজিটিভ হয়, সে ক্ষেত্রে সন্তানের শরীর থেকে কিছু পজিটিভ লোহিত রক্তকণিকা মায়ের শরীরে চলে আসে এবং অ্যান্টিবডি তৈরি করে। সাধারণত প্রথম বাচ্চার কোনো সমস্যা হয় না। তবে পরবর্তী সময়ে মা যদি অন্তঃসত্ত্বা হন এবং গর্ভস্থ সন্তান পজিটিভ রক্তের হয়, তাহলে এই অ্যান্টিবডি সন্তানের লোহিত রক্তকণিকাগুলোকে ধ্বংস করে।

‘ফলে গর্ভস্থ শিশুর শরীরে রক্তশূন্যতা ও জন্ডিস দেখা দেয়। রক্তশূন্যতার মাত্রা তীব্রতর হলে লিভার ও হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা ব্যাহত হয় এবং শিশুর শরীরে পানি জমতে থাকে। তখন গর্ভস্থ শিশুর শরীর ফুলে যায়, যাকে বলে হাইড্রপস ফেটালিস। এ অবস্থায় সঠিক চিকিৎসা না হলে শিশু পেটের মধ্যে মারা যেতে পারে। এ ঘটনা পরবর্তী সব পজিটিভ রক্তধারী শিশুর ক্ষেত্রেই ঘটতে থাকে। তবে সন্তান যদি নেগেটিভ গ্রুপের হয়, তাহলে সাধারণত কোনো সমস্যা হয় না।’

রক্তের গ্রুপ এক হলে প্রতিরোধ ও চিকিৎসা কী

১. অন্তঃসত্ত্বা প্রত্যেক মায়ের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করতে হবে। সম্ভব হলে সন্তান ধারণের পরিকল্পনা করার সময়ই করে নিন।

২. অন্তঃসত্ত্বা মায়ের রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হলে অবশ্যই স্বামীর রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করতে হবে।

৩. স্বামীর রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হলে মায়ের রক্তে আগেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না, দেখার জন্য আরএইচ অ্যান্টিবডি নির্ণয় করতে হবে।

৪. মায়ের শরীরে আরএইচ অ্যান্টিবডি অনুপস্থিত থাকলে ২৮ সপ্তাহে মাকে অ্যান্টিবডি টিকা দিতে হবে এবং সন্তানের জন্মের পর তার রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করতে হবে। সন্তানের রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পুনরায় মাকে টিকা দিতে হবে।

৫. যদি মায়ের শরীরে আগে থেকেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে থাকে, তাহলে আর টিকার কোনো ভূমিকা নেই। ওই মাকে অবশ্যই উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অন্তঃসত্ত্বা হিসেবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিতে হবে।