ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি শুক্রবার (১৩ জুন) ইসরায়েলকে ‘কঠোর শাস্তির’ হুমকি দিয়েছেন। সকালে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানের অভিজাত সামরিক বাহিনী ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)-এর প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামিসহ একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা ও দুই বিজ্ঞানী নিহত হওয়ার পর এই হুঁশিয়ারি দেন তিনি। খবর সিএনএন
কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি খামেনির
খামেনি একে ‘ভোরের অপরাধ’ বলে আখ্যা দিয়ে জানান, ইসরায়েল শুধু সামরিক নয়, আবাসিক এলাকাও লক্ষ্যবস্তু করেছে। তার ভাষায়, ‘ইসরায়েল এর জবাব পাবে এবং তা হবে অত্যন্ত কঠিন।’
খামেনির সরাসরি হুমকির পর আশঙ্কা করা হচ্ছে, ইসরায়েলের হামলার বড় ধরনের পাল্টা প্রতিক্রিয়া আসতে পারে।
ইরানি রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ এবং আধা-সরকারি মেহর নিউজ জানিয়েছে, শুক্রবার ভোরে ইসরায়েলের একাধিক হামলায় তেহরান ও এর আশপাশের অঞ্চল কেঁপে ওঠে। লক্ষ্য ছিল পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র এবং আইআরজিসি’র ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি।
নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত নাম ‘মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি’, ৬৫ বছর বয়সী সালামি সরাসরি খামেনির অধীনে কাজ করতেন এবং ইরানের সামরিক ও রাজনৈতিক মহলে ছিলেন অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি।
তিনি গত বছর এপ্রিল ও অক্টোবর মাসে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সরাসরি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। গত জানুয়ারিতে আইআরজিসি’র একটি গোপন ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র কারখানায় তার উপস্থিতির ভিডিও ইরানি মিডিয়ায় প্রচারিত হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তেহরান থেকে প্রায় ২২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে নাতাঞ্জ শহরে অবস্থিত ইরানের প্রধান পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে তাঁর দেশ। ইরানের যেসব বিজ্ঞানী দেশটির জন্য (পারমাণবিক) বোমা তৈরির কাজে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়। তিনি আরও বলেন, ‘যত দিন প্রয়োজন, তত দিন এমন হামলা চলবে।’
আরও পড়ুন : ইসরায়েলের হামলার পর কঠিন পদক্ষেপ নিল ইরান
ইরানের সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, তেহরানজুড়ে ৬ থেকে ৯টি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। হামলা হয়েছে আবাসিক ভবনেও। আল-জাজিরার তথ্য, তেহরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, ইরানে ‘আগাম প্রতিরোধমূলক’ হামলা চালিয়েছে তার দেশ।
ইতিমধ্যে ইসরায়েলজুড়ে ‘বিশেষ জরুরি অবস্থা’ জারির ঘোষণা দিয়েছে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকার।
আইআরজিসি কী
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর গঠিত এই অভিজাত বাহিনী শুধু সামরিক নয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক ক্ষমতার অন্যতম প্রধান ভিত্তি। ইয়েমেন, সিরিয়া, লেবানন ও ইরাকে ইরানের মিত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দেয় এই বাহিনী। দেশটির টেলিযোগাযোগ, জ্বালানি, নির্মাণ, এমনকি গাড়ি শিল্পেও রয়েছে তাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা।