০৪:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

পাকিস্তান-ভারতের সংঘাতে বাংলাদেশ কোন পক্ষে?

  • ঢাকা ডেস্ক
  • সর্বশেষ আপডেট : ১০:০৩:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ মে ২০২৫
  • 26

গ্রাফিক্স। সংগৃহীত

ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত বেড়েই চলেছে। বৃহস্পতিবার দুই দেশই অপরের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর দাবি করেছে। 

বৃহস্পতিবারই ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সর্বদলীয় বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকের পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেছেন, ‘অপারেশন সিন্দুর একটি চলমান অপারেশন’।

এই পরিস্থিতিতে দুটি দেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো কী অবস্থান নেবে, তা জানতে চেষ্টা করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।

‘মিডল ইস্ট ইনসাইটস’ নামের একটি প্ল্যাটফর্মের প্রতিষ্ঠাতা ড. শুভদা চৌধুরী বিবিসিকে বলেছেন, ‘ভারত ও পাকিস্তানের আশপাশের দেশগুলোয় আর্থ-সামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা মানুষের সংখ্যাই বেশি।’

‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এরকম মানুষের সংখ্যাটা খুব বড়।’

তার ভাষ্য, ‘কোভিড মহামারির পর থেকে এই সব দেশের অর্থনীতি ধুঁকছে, তাই এ ধরনের দেশগুলোর অর্থনৈতিক স্বার্থ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা; কার অবস্থান কী?

আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মিয়ানমার ও ভুটানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা বিভিন্ন দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

গত বছর বাংলাদেশে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনের পতন হয়।

এরপর থেকে বাংলাদেশের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে নানা বিষয়ে ভারতের মতপার্থক্য রয়েছে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কামার আগা বলেন, চীনও অনেক দেশে বিনিয়োগ করেছে, কিন্তু দেখা গেছে চীন ওইসব বিনিয়োগ থেকে বেশি লাভবান হয়েছে।

‘ফলে মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশ আবারও ভারতের কাছাকাছি চলে এসেছে,’ বলেন তিনি।

আরও পড়ুন : পাকিস্তানের পাশে আরও এক মুসলিম দেশ

অন্যদিকে শুভদা চৌধুরী বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত যদি দীর্ঘদিন ধরে চলে, তাহলে বিভিন্ন প্রতিবেশীর ওপর এর একেক রকম প্রভাব পড়বে।’

‘যদি নেপালের দিকে তাকানো যায়, তাদের ৬০ শতাংশ বাণিজ্যই ভারতের সঙ্গে, যেটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে,’ যোগ করেন শুভদা।

তিনি আরও বলেন, ‘বন্দর এবং বাণিজ্যের ব্যাপারে নেপাল সমস্যায় পড়বে। নেপাল ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে এবং তারা চাইবে এই সংঘাত যাতে দ্রুত শেষ হয়।’

‘তবে চীন এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে নেপালের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে’, বলেন শুভদা চৌধুরী।

তার মতে, ভুটানের ক্ষেত্রেও একই ধরনের অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিতে পারে। কারণ ভারতের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেখানকার পর্যটন শিল্পও প্রভাবিত হবে।

আছে আরও মত 

দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতি বিশেষজ্ঞ ও সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ধনঞ্জয় ত্রিপাঠি মনে করেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনার বিষয়ে আফগানিস্তান ছাড়া বাকি দেশগুলো নিরপেক্ষ এবং নীরব থাকবে।

ত্রিপাঠির ভাষ্য, ‘ভারত এই অঞ্চলের একটা বৃহৎ অর্থনীতির দেশ এবং ছোট ছোট প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের একাধিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে।’

‘নেপাল ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোর কাছে পর্যটন থেকে আয় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং তারা চাইবে যে এই সংঘাত তাড়াতাড়ি শেষ হোক,’ মত ত্রিপাঠির।

আরও পড়ুন: ভারতকে কঠিন জবাব দিতে অংশ নেয় পাকিস্তানের ১২৫ যুদ্ধবিমান

ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে এবং সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকটের সময় ভারত শ্রীলঙ্কাকে অনেক সহায়তা করেছে।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়েছিলেন।

ধনঞ্জয় ত্রিপাঠি মনে করেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার সময়ে এই দেশগুলো চাইবে যাতে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হয়।

পররাষ্ট্র বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কামার আগাও এর সঙ্গে একমত বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে।

কামার আগা বলেন, ‘সংঘাত বাড়লে অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে। কারণ যুদ্ধের সময় প্রতিরক্ষা ব্যয় বেড়ে যায় এবং তাতে কর্মসংস্থান হয় না।’

‘এদিকে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার পাকিস্তানের কিছুটা কাছাকাছি চলে এসেছে এবং তাদের বড় ক্ষতি হতে পারে। তবে বাংলাদেশে ভারতের বড়সড় বিনিয়োগ আছে,’ যোগ করেন আগা।

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সেভ করুন

পাকিস্তান-ভারতের সংঘাতে বাংলাদেশ কোন পক্ষে?

সর্বশেষ আপডেট : ১০:০৩:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ মে ২০২৫

ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত বেড়েই চলেছে। বৃহস্পতিবার দুই দেশই অপরের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর দাবি করেছে। 

বৃহস্পতিবারই ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সর্বদলীয় বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকের পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেছেন, ‘অপারেশন সিন্দুর একটি চলমান অপারেশন’।

এই পরিস্থিতিতে দুটি দেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো কী অবস্থান নেবে, তা জানতে চেষ্টা করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।

‘মিডল ইস্ট ইনসাইটস’ নামের একটি প্ল্যাটফর্মের প্রতিষ্ঠাতা ড. শুভদা চৌধুরী বিবিসিকে বলেছেন, ‘ভারত ও পাকিস্তানের আশপাশের দেশগুলোয় আর্থ-সামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা মানুষের সংখ্যাই বেশি।’

‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এরকম মানুষের সংখ্যাটা খুব বড়।’

তার ভাষ্য, ‘কোভিড মহামারির পর থেকে এই সব দেশের অর্থনীতি ধুঁকছে, তাই এ ধরনের দেশগুলোর অর্থনৈতিক স্বার্থ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা; কার অবস্থান কী?

আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মিয়ানমার ও ভুটানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা বিভিন্ন দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

গত বছর বাংলাদেশে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনের পতন হয়।

এরপর থেকে বাংলাদেশের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে নানা বিষয়ে ভারতের মতপার্থক্য রয়েছে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কামার আগা বলেন, চীনও অনেক দেশে বিনিয়োগ করেছে, কিন্তু দেখা গেছে চীন ওইসব বিনিয়োগ থেকে বেশি লাভবান হয়েছে।

‘ফলে মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশ আবারও ভারতের কাছাকাছি চলে এসেছে,’ বলেন তিনি।

আরও পড়ুন : পাকিস্তানের পাশে আরও এক মুসলিম দেশ

অন্যদিকে শুভদা চৌধুরী বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত যদি দীর্ঘদিন ধরে চলে, তাহলে বিভিন্ন প্রতিবেশীর ওপর এর একেক রকম প্রভাব পড়বে।’

‘যদি নেপালের দিকে তাকানো যায়, তাদের ৬০ শতাংশ বাণিজ্যই ভারতের সঙ্গে, যেটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে,’ যোগ করেন শুভদা।

তিনি আরও বলেন, ‘বন্দর এবং বাণিজ্যের ব্যাপারে নেপাল সমস্যায় পড়বে। নেপাল ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে এবং তারা চাইবে এই সংঘাত যাতে দ্রুত শেষ হয়।’

‘তবে চীন এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে নেপালের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে’, বলেন শুভদা চৌধুরী।

তার মতে, ভুটানের ক্ষেত্রেও একই ধরনের অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিতে পারে। কারণ ভারতের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেখানকার পর্যটন শিল্পও প্রভাবিত হবে।

আছে আরও মত 

দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতি বিশেষজ্ঞ ও সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ধনঞ্জয় ত্রিপাঠি মনে করেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনার বিষয়ে আফগানিস্তান ছাড়া বাকি দেশগুলো নিরপেক্ষ এবং নীরব থাকবে।

ত্রিপাঠির ভাষ্য, ‘ভারত এই অঞ্চলের একটা বৃহৎ অর্থনীতির দেশ এবং ছোট ছোট প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের একাধিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে।’

‘নেপাল ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোর কাছে পর্যটন থেকে আয় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং তারা চাইবে যে এই সংঘাত তাড়াতাড়ি শেষ হোক,’ মত ত্রিপাঠির।

আরও পড়ুন: ভারতকে কঠিন জবাব দিতে অংশ নেয় পাকিস্তানের ১২৫ যুদ্ধবিমান

ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে এবং সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকটের সময় ভারত শ্রীলঙ্কাকে অনেক সহায়তা করেছে।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়েছিলেন।

ধনঞ্জয় ত্রিপাঠি মনে করেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার সময়ে এই দেশগুলো চাইবে যাতে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হয়।

পররাষ্ট্র বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কামার আগাও এর সঙ্গে একমত বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে।

কামার আগা বলেন, ‘সংঘাত বাড়লে অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে। কারণ যুদ্ধের সময় প্রতিরক্ষা ব্যয় বেড়ে যায় এবং তাতে কর্মসংস্থান হয় না।’

‘এদিকে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার পাকিস্তানের কিছুটা কাছাকাছি চলে এসেছে এবং তাদের বড় ক্ষতি হতে পারে। তবে বাংলাদেশে ভারতের বড়সড় বিনিয়োগ আছে,’ যোগ করেন আগা।