০৯:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

দেশের অর্থনীতি পাল্টাতে চট্টগ্রাম বন্দরই আমাদের ভরসা : প্রধান উপদেষ্টা

  • ঢাকা ডেস্ক
  • সর্বশেষ আপডেট : ০৩:৩২:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
  • 13

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির পরিবর্তনে চট্টগ্রাম বন্দরই মূল ভরসা। এটি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এই বন্দরকে বাদ দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে নতুন কোনো অধ্যায়ে প্রবেশ করানোর সুযোগ নেই। বন্দরের পথ উন্মুক্ত হলে দেশের অর্থনীতিরও অগ্রগতি হবে। অন্যথায় যত চেষ্টাই করা হোক, অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।

প্রধান উপদেষ্টার চট্টগ্রাম সফরের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালে বন্দরের সক্ষমতা সম্পর্কে তার কাছে ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা বলেন।

বুধবার (১৪ মে) চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি-৫ প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য একটি বড় সুযোগ।’

তিনি বলেন, ‘যদি সরকারের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হয়, তাহলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে।’

চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড। কিন্তু যদি হৃৎপিণ্ড দুর্বল হয়, কোনো ডাক্তারই তা আর ভালো করতে পারে না। তাই একে বিশ্বমানের করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বন্দর ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত বৈশ্বিক পর্যায়ের শীর্ষ সংস্থাগুলোকে আগেও ডাকা হয়েছিল, কিন্তু কার্যকর কোনো অগ্রগতি হয়নি।’

চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এই হৃৎপিণ্ডকে আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। এজন্য আমি নেপাল ও ভারতের সাতটি উত্তর-পূর্ব রাজ্যের (সেভেন সিস্টার্স) কথা বলেছি। যদি তারা এতে যুক্ত হয়, তারা উপকৃত হবে, আমরাও হবো। যারা যুক্ত হবে না, তারা পিছিয়ে পড়বে।’

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে নিজের শৈশবস্মৃতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই সফরের জন্য আমি অপেক্ষা করছিলাম। চট্টগ্রাম বন্দর আমার জন্য নতুন কিছু নয়। আমি শৈশব থেকেই এর সঙ্গে পরিচিত। এটি অনেক বদলেছে, তবে দুঃখের বিষয় হলো পরিবর্তন ধীর গতির। আমি যখন সুযোগ পেলাম, তখন থেকেই ভেবেছি কী করা যায়।’

আরও পড়ুন :  ‘এনসিপি কালাজ্বরে ভুগছে আর জামায়াতের কোলে বসে শুরা পান করছে’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বিশ্ব অনেক এগিয়ে গেছে, আর আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি। কেউ গুরুত্ব দেয় না। এজন্য আমি পরিবর্তনের জন্য চাপ দিচ্ছি। আমি বলেছি বন্দরের পরিচালনার দায়িত্ব বিশ্বের শীর্ষ অপারেটরদের হাতে তুলে দিতে। আশা করি সবাই একদিন বুঝবে।’

নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন প্রধান উপদেষ্টার বন্দর উন্নয়নের আগ্রহের প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের আশেপাশে একাধিক টার্মিনাল নির্মাণ কনটেইনার জট কমাতে সাহায্য করবে। ‘আমি আশা করি আগামী ছয় মাসের মধ্যেই আপনি পরিবর্তন দেখতে পাবেন,’ বলেন তিনি।

চট্টগ্রাম বন্দর

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বন্দর আধুনিকায়ন করার বিকল্প নেই।’

তিনি জানান, বাংলাদেশের ৯২ শতাংশ বৈদেশিক বাণিজ্য এবং তার ৯৮ শতাংশ নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল দিয়ে সম্পন্ন হয়।

মনিরুজ্জামান বলেন, প্রাকৃতিক কারণে ২০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়তে পারে না। এ কারণে বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

দুপুরে প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে সার্কিট হাউস ত্যাগ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছে পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠান। এতে ২০১১ থেকে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রায় ২২ হাজার ৬০০ জন শিক্ষার্থীকে সনদপত্র প্রদান করা হবে। এছাড়া ২০১৫-২০২৫ সালের ২২ জন শিক্ষার্থীকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্ষুদ্রঋণ ও দারিদ্র্য বিমোচনে অবদানের জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ডি লিট ডিগ্রি প্রদান করবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন শেষে হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামে নিজের পৈতৃক বাড়ি পরিদর্শনে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে তিনি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে সময় কাটাবেন। এরপর সন্ধ্যায় বিমানে চট্টগ্রাম ত্যাগ করার কথা রয়েছে তাঁর।

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সেভ করুন

দেশের অর্থনীতি পাল্টাতে চট্টগ্রাম বন্দরই আমাদের ভরসা : প্রধান উপদেষ্টা

সর্বশেষ আপডেট : ০৩:৩২:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির পরিবর্তনে চট্টগ্রাম বন্দরই মূল ভরসা। এটি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এই বন্দরকে বাদ দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে নতুন কোনো অধ্যায়ে প্রবেশ করানোর সুযোগ নেই। বন্দরের পথ উন্মুক্ত হলে দেশের অর্থনীতিরও অগ্রগতি হবে। অন্যথায় যত চেষ্টাই করা হোক, অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।

প্রধান উপদেষ্টার চট্টগ্রাম সফরের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালে বন্দরের সক্ষমতা সম্পর্কে তার কাছে ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা বলেন।

বুধবার (১৪ মে) চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি-৫ প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য একটি বড় সুযোগ।’

তিনি বলেন, ‘যদি সরকারের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হয়, তাহলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে।’

চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড। কিন্তু যদি হৃৎপিণ্ড দুর্বল হয়, কোনো ডাক্তারই তা আর ভালো করতে পারে না। তাই একে বিশ্বমানের করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বন্দর ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত বৈশ্বিক পর্যায়ের শীর্ষ সংস্থাগুলোকে আগেও ডাকা হয়েছিল, কিন্তু কার্যকর কোনো অগ্রগতি হয়নি।’

চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এই হৃৎপিণ্ডকে আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। এজন্য আমি নেপাল ও ভারতের সাতটি উত্তর-পূর্ব রাজ্যের (সেভেন সিস্টার্স) কথা বলেছি। যদি তারা এতে যুক্ত হয়, তারা উপকৃত হবে, আমরাও হবো। যারা যুক্ত হবে না, তারা পিছিয়ে পড়বে।’

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে নিজের শৈশবস্মৃতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই সফরের জন্য আমি অপেক্ষা করছিলাম। চট্টগ্রাম বন্দর আমার জন্য নতুন কিছু নয়। আমি শৈশব থেকেই এর সঙ্গে পরিচিত। এটি অনেক বদলেছে, তবে দুঃখের বিষয় হলো পরিবর্তন ধীর গতির। আমি যখন সুযোগ পেলাম, তখন থেকেই ভেবেছি কী করা যায়।’

আরও পড়ুন :  ‘এনসিপি কালাজ্বরে ভুগছে আর জামায়াতের কোলে বসে শুরা পান করছে’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বিশ্ব অনেক এগিয়ে গেছে, আর আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি। কেউ গুরুত্ব দেয় না। এজন্য আমি পরিবর্তনের জন্য চাপ দিচ্ছি। আমি বলেছি বন্দরের পরিচালনার দায়িত্ব বিশ্বের শীর্ষ অপারেটরদের হাতে তুলে দিতে। আশা করি সবাই একদিন বুঝবে।’

নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন প্রধান উপদেষ্টার বন্দর উন্নয়নের আগ্রহের প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের আশেপাশে একাধিক টার্মিনাল নির্মাণ কনটেইনার জট কমাতে সাহায্য করবে। ‘আমি আশা করি আগামী ছয় মাসের মধ্যেই আপনি পরিবর্তন দেখতে পাবেন,’ বলেন তিনি।

চট্টগ্রাম বন্দর

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বন্দর আধুনিকায়ন করার বিকল্প নেই।’

তিনি জানান, বাংলাদেশের ৯২ শতাংশ বৈদেশিক বাণিজ্য এবং তার ৯৮ শতাংশ নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল দিয়ে সম্পন্ন হয়।

মনিরুজ্জামান বলেন, প্রাকৃতিক কারণে ২০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়তে পারে না। এ কারণে বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

দুপুরে প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে সার্কিট হাউস ত্যাগ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছে পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠান। এতে ২০১১ থেকে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রায় ২২ হাজার ৬০০ জন শিক্ষার্থীকে সনদপত্র প্রদান করা হবে। এছাড়া ২০১৫-২০২৫ সালের ২২ জন শিক্ষার্থীকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্ষুদ্রঋণ ও দারিদ্র্য বিমোচনে অবদানের জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ডি লিট ডিগ্রি প্রদান করবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন শেষে হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামে নিজের পৈতৃক বাড়ি পরিদর্শনে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে তিনি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে সময় কাটাবেন। এরপর সন্ধ্যায় বিমানে চট্টগ্রাম ত্যাগ করার কথা রয়েছে তাঁর।