০৮:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

শ্রমিকদের অবস্থার আগের মতো থাকলে নতুন বাংলাদেশ সম্ভব নয়: প্রধান উপদেষ্টা

  • ঢাকা ডেস্ক
  • সর্বশেষ আপডেট : ০৪:১৯:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫
  • 20

শ্রমিকদের অবস্থার পরিবর্তন না হলে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গঠন সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের ধরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় শ্রমিকদের কল্যাণে যৌথ প্রচেষ্টার গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (০১ মে) বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি শ্রমিকদের অবস্থা আগের মতোই অপরিবর্তিত থাকে, তাহলে নতুন বাংলাদেশ গঠনের জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে না।’

শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ

এ সময় শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের ভালো অবস্থান নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব। এটি আমাদের জন্য এক বিশাল সুযোগ।’

কমিশনের দেওয়া সুপারিশগুলো দেখে তিনি ব্যক্তিগতভাবে খুবই মুগ্ধ হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন ড. ইউনূস।

তিনি বলেন, ‘যেসব সুপারিশ তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, আমাদের দায়িত্ব সেগুলো নিয়েই যাত্রা শুরু করা।’

এই সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন নতুন বাংলাদেশের মজবুত ভিত্তি গঠনে সহায়ক হবে বলেও মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

ইতোমধ্যে সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করা হয়েছে বলেন জানান তিনি। পাশাপাশি এই পদক্ষেপের সফলতার নিয়েও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান।

তিনি বলেন, ‘এ বছরের মে দিবস অন্যান্য বছরের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন, কারণ এই বছর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে।’

আরও পড়ুন : ছুটির দিনেও ঢাকার বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এএইচএম শফিকুজ্জামান, আইএলও মহাপরিচালক (রেকর্ডকৃত বক্তব্যে), বাংলাদেশে আইএলওর পরিচালক, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, শ্রমিক ও মালিকপক্ষের প্রতিনিধি প্রমুখ। এ উপলক্ষে একটি প্রামাণ্যচিত্রও প্রদর্শিত হয়।

অনুষ্ঠানে শ্রমিক ও তাদের পরিবারের মধ্যে আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ করেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে পারস্পরিক সহায়তা জোরদার হলে বাংলাদেশের অগ্রগতি আরও গতি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এর আগে মে দিবস ও জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীকে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘শ্রমিক-মালিক সম্প্রীতি জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে।’

তিনি বলেন, ‘মে দিবস শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্কের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।’

‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’

এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘দেশ গঠনে শ্রমিক ও মালিক একে অপরের অপরিহার্য অংশীদার। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি শক্তিশালী, স্বনির্ভর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারে।’

পোশাক, কৃষি, শিল্প, নির্মাণ, পরিবহন ও প্রযুক্তিসহ প্রতিটি খাতের উন্নয়নের পেছনে শ্রমিক ও মালিক উভয়ের কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠা রয়েছে বলে মত দেন তিনি। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘দেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে হলে ঐক্য, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং আস্থার পরিবেশ সুদৃঢ় করতে হবে।’

সব শ্রমিকের ন্যায্য স্বীকৃতি ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও তার সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ কেবল একটি অধিকার নয়, এটি শিল্প ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি।’

এ সময় সব শ্রমিক, বিশেষত যারা শ্রম অধিকার রক্ষায় আত্মত্যাগ করেছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে মে দিবস ও জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সব কর্মসূচির সফলতা কামনা করেন ড. ইউনূস।

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সেভ করুন

শ্রমিকদের অবস্থার আগের মতো থাকলে নতুন বাংলাদেশ সম্ভব নয়: প্রধান উপদেষ্টা

সর্বশেষ আপডেট : ০৪:১৯:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫

শ্রমিকদের অবস্থার পরিবর্তন না হলে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গঠন সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের ধরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় শ্রমিকদের কল্যাণে যৌথ প্রচেষ্টার গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (০১ মে) বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি শ্রমিকদের অবস্থা আগের মতোই অপরিবর্তিত থাকে, তাহলে নতুন বাংলাদেশ গঠনের জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে না।’

শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ

এ সময় শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের ভালো অবস্থান নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব। এটি আমাদের জন্য এক বিশাল সুযোগ।’

কমিশনের দেওয়া সুপারিশগুলো দেখে তিনি ব্যক্তিগতভাবে খুবই মুগ্ধ হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন ড. ইউনূস।

তিনি বলেন, ‘যেসব সুপারিশ তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, আমাদের দায়িত্ব সেগুলো নিয়েই যাত্রা শুরু করা।’

এই সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন নতুন বাংলাদেশের মজবুত ভিত্তি গঠনে সহায়ক হবে বলেও মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

ইতোমধ্যে সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করা হয়েছে বলেন জানান তিনি। পাশাপাশি এই পদক্ষেপের সফলতার নিয়েও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান।

তিনি বলেন, ‘এ বছরের মে দিবস অন্যান্য বছরের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন, কারণ এই বছর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে।’

আরও পড়ুন : ছুটির দিনেও ঢাকার বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এএইচএম শফিকুজ্জামান, আইএলও মহাপরিচালক (রেকর্ডকৃত বক্তব্যে), বাংলাদেশে আইএলওর পরিচালক, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, শ্রমিক ও মালিকপক্ষের প্রতিনিধি প্রমুখ। এ উপলক্ষে একটি প্রামাণ্যচিত্রও প্রদর্শিত হয়।

অনুষ্ঠানে শ্রমিক ও তাদের পরিবারের মধ্যে আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ করেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে পারস্পরিক সহায়তা জোরদার হলে বাংলাদেশের অগ্রগতি আরও গতি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এর আগে মে দিবস ও জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীকে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘শ্রমিক-মালিক সম্প্রীতি জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে।’

তিনি বলেন, ‘মে দিবস শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্কের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।’

‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’

এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘দেশ গঠনে শ্রমিক ও মালিক একে অপরের অপরিহার্য অংশীদার। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি শক্তিশালী, স্বনির্ভর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারে।’

পোশাক, কৃষি, শিল্প, নির্মাণ, পরিবহন ও প্রযুক্তিসহ প্রতিটি খাতের উন্নয়নের পেছনে শ্রমিক ও মালিক উভয়ের কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠা রয়েছে বলে মত দেন তিনি। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘দেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে হলে ঐক্য, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং আস্থার পরিবেশ সুদৃঢ় করতে হবে।’

সব শ্রমিকের ন্যায্য স্বীকৃতি ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও তার সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ কেবল একটি অধিকার নয়, এটি শিল্প ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি।’

এ সময় সব শ্রমিক, বিশেষত যারা শ্রম অধিকার রক্ষায় আত্মত্যাগ করেছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে মে দিবস ও জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সব কর্মসূচির সফলতা কামনা করেন ড. ইউনূস।