০৩:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

এবার ইসরাইল-ইরান যুদ্ধ বন্ধে এগিয়ে আসছেন পুতিন

  • ঢাকা ডেস্ক
  • সর্বশেষ আপডেট : ০১:৩২:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫
  • 23

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পুরোনো ছবি

ইউক্রেন-রাশিয়ার তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজেকে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে তুলে ধরার নতুন সুযোগ হিসেবে ইসরাইল ও ইরানের চলমান সংঘাতকে কাজে লাগাতে চাচ্ছেন।

রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন নিজেকে এই সংঘাতে একজন সম্ভাব্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তুলে ধরেছেন।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরানের সঙ্গে মস্কোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পুতিন কতটা নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে পারবেন তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

ইউক্রেনে হামলা ও গাজা যুদ্ধ নিয়ে মস্কোর সঙ্গে ইসরাইলের ঐতিহ্যগতভাবে ভালো সম্পর্ক টানাপোড়েনে পড়েছে।

রাশিয়ায় জন্ম নেওয়া বড় একটি জনগোষ্ঠী ইসরাইলে বসবাস করছে। অন্যদিকে, রাশিয়া ইরানের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক আরও গভীর করেছে।

গত শুক্রবার ইরানে ইসরাইলের হামলার নিন্দা জানাতে দেরি করেনি মস্কো। পুতিন তৎক্ষণাৎ ফোন করেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও ইরানি প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানকে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দেন।

কার্নেগি এন্ডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এর বিশ্লেষক নিকোল গ্রাজিউস্কি বলেন, নিজেকে একটি অপরিহার্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে উপস্থাপন করে মস্কো কূটনৈতিকভাবে পুনরায় প্রাসঙ্গিকতা অর্জনের চেষ্টা করছে, যদিও ইউরোপে তারা এখন অনেকটা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।

তিনি বলেন, তেহরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মিত্রতা থাকায় রাশিয়া চাচ্ছে না ইরানে কোনো সরকার পরিবর্তন হোক। বিশেষত যদি সেটা পশ্চিমাপন্থী সরকার হয়।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে রাশিয়া ও ইরান একটি বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যার আওতায় সামরিক সহযোগিতা আরও জোরদার হয়েছে।

ইউক্রেন ও তার মিত্ররা দীর্ঘদিন ধরেই ইরানের বিরুদ্ধে রাশিয়াকে ড্রোন ও স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ করে আসছে।

ফ্রান্সের ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস-এর গবেষক তাতিয়ানা কাস্তুয়েভা-জাঁ বলেন, সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের পতনের পর মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার প্রভাব হ্রাস পায়। এখন তারা আবার সেই প্রভাব ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছে।

ক্রিমিয়া দখলের পর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার মুখে রাশিয়া সিরিয়ায় আসাদকে সমর্থন ও ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে ইরানের পক্ষে ভূমিকা রেখে আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে।

 

ইরানের সঙ্গে পুতিনের ঘনিষ্ঠতা

কিন্তু এবার ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্ব পুতিনের মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা গ্রহণকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে।

রুশ বিশ্লেষক কনস্টান্টিন কালাচেভ বলেন, মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে হলে কোনো পক্ষের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট হওয়া চলবে না।

রাশিয়া যেহেতু ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত, তাই ইউরোপ বা ইসরাইলে তাদের মধ্যস্থতা গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ পুতিনের মধ্যস্থতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।

তিনি বলেন, যে দেশ জাতিসংঘ সনদের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়ে কয়েক বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, সেই দেশ কীভাবে নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হতে পারে, আমি তা মেনে নিতে পারি না।

মঙ্গলবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, পুতিনের প্রস্তাবে ইসরাইলের পক্ষ থেকে ‘মধ্যস্থতার কোনো আগ্রহ বা শান্তিপূর্ণ সমাধানে অগ্রসর হওয়ার মনোভাব’ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

 

যুক্তরাষ্ট্র কী ভাবছে

এমন পরিস্থিতিতে পুতিনের মধ্যস্থতার সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে উদ্বিগ্ন নন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তিনি জানিয়েছেন, পুতিনের মধ্যস্থতাকারী হওয়ার প্রস্তাব তিনি সমর্থন করেন।

ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার নতুন ক্ষেত্র খুঁজছে রাশিয়া।

তাতিয়ানা কাস্তুয়েভা-জাঁ বলেন, ইউক্রেন ইস্যুর বাইরেও রাশিয়া ট্রাম্পকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।

গত শুক্রবার ইসরাইল ইরানে হামলা শুরুর আগেই পুতিন ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে একটি চুক্তিতে সহায়তা করার প্রস্তাব দেন।

কিন্তু অনেক বিশ্লেষকের মতে, ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান যুদ্ধ ও আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে পুতিনের ‘শান্তি প্রস্তাব’ বিশ্ববাসীর কাছে উদ্বেগের বিষয়।

দ্য ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক আন্না বর্শচেভস্কায়া বলেন, এই মুহূর্তে পুতিনকে শান্তির মধ্যস্থতাকারী হিসেবে গ্রহণ করা মানে হবে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপীয় ভূখণ্ডে সবচেয়ে বড় আগ্রাসন চালানো একটি দেশকে আবারও অপরিহার্য পরাশক্তি হিসেবে বৈধতা দেওয়া।

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সেভ করুন

এবার ইসরাইল-ইরান যুদ্ধ বন্ধে এগিয়ে আসছেন পুতিন

সর্বশেষ আপডেট : ০১:৩২:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

ইউক্রেন-রাশিয়ার তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজেকে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে তুলে ধরার নতুন সুযোগ হিসেবে ইসরাইল ও ইরানের চলমান সংঘাতকে কাজে লাগাতে চাচ্ছেন।

রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন নিজেকে এই সংঘাতে একজন সম্ভাব্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তুলে ধরেছেন।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরানের সঙ্গে মস্কোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পুতিন কতটা নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে পারবেন তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

ইউক্রেনে হামলা ও গাজা যুদ্ধ নিয়ে মস্কোর সঙ্গে ইসরাইলের ঐতিহ্যগতভাবে ভালো সম্পর্ক টানাপোড়েনে পড়েছে।

রাশিয়ায় জন্ম নেওয়া বড় একটি জনগোষ্ঠী ইসরাইলে বসবাস করছে। অন্যদিকে, রাশিয়া ইরানের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক আরও গভীর করেছে।

গত শুক্রবার ইরানে ইসরাইলের হামলার নিন্দা জানাতে দেরি করেনি মস্কো। পুতিন তৎক্ষণাৎ ফোন করেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও ইরানি প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানকে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দেন।

কার্নেগি এন্ডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এর বিশ্লেষক নিকোল গ্রাজিউস্কি বলেন, নিজেকে একটি অপরিহার্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে উপস্থাপন করে মস্কো কূটনৈতিকভাবে পুনরায় প্রাসঙ্গিকতা অর্জনের চেষ্টা করছে, যদিও ইউরোপে তারা এখন অনেকটা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।

তিনি বলেন, তেহরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মিত্রতা থাকায় রাশিয়া চাচ্ছে না ইরানে কোনো সরকার পরিবর্তন হোক। বিশেষত যদি সেটা পশ্চিমাপন্থী সরকার হয়।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে রাশিয়া ও ইরান একটি বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যার আওতায় সামরিক সহযোগিতা আরও জোরদার হয়েছে।

ইউক্রেন ও তার মিত্ররা দীর্ঘদিন ধরেই ইরানের বিরুদ্ধে রাশিয়াকে ড্রোন ও স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ করে আসছে।

ফ্রান্সের ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস-এর গবেষক তাতিয়ানা কাস্তুয়েভা-জাঁ বলেন, সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের পতনের পর মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার প্রভাব হ্রাস পায়। এখন তারা আবার সেই প্রভাব ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছে।

ক্রিমিয়া দখলের পর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার মুখে রাশিয়া সিরিয়ায় আসাদকে সমর্থন ও ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে ইরানের পক্ষে ভূমিকা রেখে আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে।

 

ইরানের সঙ্গে পুতিনের ঘনিষ্ঠতা

কিন্তু এবার ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্ব পুতিনের মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা গ্রহণকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে।

রুশ বিশ্লেষক কনস্টান্টিন কালাচেভ বলেন, মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে হলে কোনো পক্ষের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট হওয়া চলবে না।

রাশিয়া যেহেতু ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত, তাই ইউরোপ বা ইসরাইলে তাদের মধ্যস্থতা গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ পুতিনের মধ্যস্থতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।

তিনি বলেন, যে দেশ জাতিসংঘ সনদের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়ে কয়েক বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, সেই দেশ কীভাবে নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হতে পারে, আমি তা মেনে নিতে পারি না।

মঙ্গলবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, পুতিনের প্রস্তাবে ইসরাইলের পক্ষ থেকে ‘মধ্যস্থতার কোনো আগ্রহ বা শান্তিপূর্ণ সমাধানে অগ্রসর হওয়ার মনোভাব’ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

 

যুক্তরাষ্ট্র কী ভাবছে

এমন পরিস্থিতিতে পুতিনের মধ্যস্থতার সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে উদ্বিগ্ন নন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তিনি জানিয়েছেন, পুতিনের মধ্যস্থতাকারী হওয়ার প্রস্তাব তিনি সমর্থন করেন।

ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার নতুন ক্ষেত্র খুঁজছে রাশিয়া।

তাতিয়ানা কাস্তুয়েভা-জাঁ বলেন, ইউক্রেন ইস্যুর বাইরেও রাশিয়া ট্রাম্পকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।

গত শুক্রবার ইসরাইল ইরানে হামলা শুরুর আগেই পুতিন ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে একটি চুক্তিতে সহায়তা করার প্রস্তাব দেন।

কিন্তু অনেক বিশ্লেষকের মতে, ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান যুদ্ধ ও আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে পুতিনের ‘শান্তি প্রস্তাব’ বিশ্ববাসীর কাছে উদ্বেগের বিষয়।

দ্য ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক আন্না বর্শচেভস্কায়া বলেন, এই মুহূর্তে পুতিনকে শান্তির মধ্যস্থতাকারী হিসেবে গ্রহণ করা মানে হবে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপীয় ভূখণ্ডে সবচেয়ে বড় আগ্রাসন চালানো একটি দেশকে আবারও অপরিহার্য পরাশক্তি হিসেবে বৈধতা দেওয়া।