০৩:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ভয়াবহ হামলা চালাল ইসরায়েল

  • ঢাকা ডেস্ক
  • সর্বশেষ আপডেট : ১০:০৪:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫
  • 24

ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির রাজধানী তেহরান এবং আশপাশের এলাকায় অবস্থিত এসব স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আগেই রেকর্ড করে রাখা একটি ভিডিও বার্তায় এসব হামলার কথা নিশ্চিত করেন।

শুক্রবার (১৩ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাদ্যমটি বলছে, শুক্রবার ভোরে এক ভিডিও বার্তায় এসব হামলার কথা নিশ্চিত করেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, “এই অভিযানের লক্ষ্য হচ্ছে ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কারখানাগুলো ধ্বংস করা। এই কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অভিযান চলবে, কারণ ইসরায়েলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই এখন প্রধান লক্ষ্য।”

ইরানে ইসরায়েলের হামলা

এদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানান, ভোররাতে চালানো এই অভিযানে তারা ইরানের “ডজনখানেক পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাকে” লক্ষ্যবস্তু করেছে। তার দাবি, ইরানের কাছে এমন পরিমাণ ইউরেনিয়াম মজুত আছে, যা দিয়ে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই তারা ১৫টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারবে।

ইসরায়েলি দৈনিক টাইমস অব ইসরায়েলকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে, তারা “নেশন অব লায়ন্স” নামের এক বিমান অভিযানে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। সেনাবাহিনীর ভাষ্য অনুযায়ী, ইরান থেকে আসা “তাৎক্ষণিক হুমকি” মোকাবিলায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম নূর নিউজ জানিয়েছে, তেহরান শহর ও আশপাশে একাধিক জোরালো বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় ইরান তার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ সতর্ক অবস্থায় রেখেছে এবং ইমাম খোমেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সব ধরনের ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।

ইরানি রাষ্ট্রমাধ্যম প্রেস টিভি জানায়, হামলায় “অনেক হতাহত” হয়েছে, যদিও নির্দিষ্ট সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি। ইসরায়েলি এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জানান, হামলায় ইরানের সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ ও কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের পারমাণবিক বিজ্ঞানীর মৃত্যুর সম্ভাবনা রয়েছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ হামলাকে “প্রতিরোধমূলক আঘাত” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “ইরান থেকে শিগগিরই ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার আশঙ্কা রয়েছে।”

আরও পড়ুন : ইসরায়েলের হামলার পর কঠিন পদক্ষেপ নিল ইরান

ইসরায়েলজুড়ে সাইরেন বাজিয়ে জনগণকে সতর্ক করা হয়েছে এবং ভোর ৩টা থেকে “জরুরি কার্যক্রম ছাড়া সবকিছু” বন্ধ রাখার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জনসমাগম এবং অধিকাংশ কর্মস্থল বন্ধ থাকবে। দেশটির বিমান চলাচলও সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, “এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্র জড়িত নয়। আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।” তিনি ইরানকে সতর্ক করে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের কোনও স্বার্থ বা সেনার ওপর হামলা চালানো হলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ।”

অবশ্য হামলার আগে গত বুধবার ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদেহ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “পারমাণবিক আলোচনা ভেঙে পড়লে এবং যুদ্ধ শুরু হলে, আমাদের লক্ষ্য হবে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত সব মার্কিন সামরিক ঘাঁটি। প্রয়োজনে আমরা এগুলোতে সরাসরি আঘাত করব।”

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সেভ করুন

ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ভয়াবহ হামলা চালাল ইসরায়েল

সর্বশেষ আপডেট : ১০:০৪:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫

ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির রাজধানী তেহরান এবং আশপাশের এলাকায় অবস্থিত এসব স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আগেই রেকর্ড করে রাখা একটি ভিডিও বার্তায় এসব হামলার কথা নিশ্চিত করেন।

শুক্রবার (১৩ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাদ্যমটি বলছে, শুক্রবার ভোরে এক ভিডিও বার্তায় এসব হামলার কথা নিশ্চিত করেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, “এই অভিযানের লক্ষ্য হচ্ছে ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কারখানাগুলো ধ্বংস করা। এই কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অভিযান চলবে, কারণ ইসরায়েলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই এখন প্রধান লক্ষ্য।”

ইরানে ইসরায়েলের হামলা

এদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানান, ভোররাতে চালানো এই অভিযানে তারা ইরানের “ডজনখানেক পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাকে” লক্ষ্যবস্তু করেছে। তার দাবি, ইরানের কাছে এমন পরিমাণ ইউরেনিয়াম মজুত আছে, যা দিয়ে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই তারা ১৫টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারবে।

ইসরায়েলি দৈনিক টাইমস অব ইসরায়েলকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে, তারা “নেশন অব লায়ন্স” নামের এক বিমান অভিযানে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। সেনাবাহিনীর ভাষ্য অনুযায়ী, ইরান থেকে আসা “তাৎক্ষণিক হুমকি” মোকাবিলায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম নূর নিউজ জানিয়েছে, তেহরান শহর ও আশপাশে একাধিক জোরালো বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় ইরান তার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ সতর্ক অবস্থায় রেখেছে এবং ইমাম খোমেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সব ধরনের ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।

ইরানি রাষ্ট্রমাধ্যম প্রেস টিভি জানায়, হামলায় “অনেক হতাহত” হয়েছে, যদিও নির্দিষ্ট সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি। ইসরায়েলি এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জানান, হামলায় ইরানের সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ ও কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের পারমাণবিক বিজ্ঞানীর মৃত্যুর সম্ভাবনা রয়েছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ হামলাকে “প্রতিরোধমূলক আঘাত” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “ইরান থেকে শিগগিরই ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার আশঙ্কা রয়েছে।”

আরও পড়ুন : ইসরায়েলের হামলার পর কঠিন পদক্ষেপ নিল ইরান

ইসরায়েলজুড়ে সাইরেন বাজিয়ে জনগণকে সতর্ক করা হয়েছে এবং ভোর ৩টা থেকে “জরুরি কার্যক্রম ছাড়া সবকিছু” বন্ধ রাখার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জনসমাগম এবং অধিকাংশ কর্মস্থল বন্ধ থাকবে। দেশটির বিমান চলাচলও সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, “এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্র জড়িত নয়। আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।” তিনি ইরানকে সতর্ক করে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের কোনও স্বার্থ বা সেনার ওপর হামলা চালানো হলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ।”

অবশ্য হামলার আগে গত বুধবার ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদেহ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “পারমাণবিক আলোচনা ভেঙে পড়লে এবং যুদ্ধ শুরু হলে, আমাদের লক্ষ্য হবে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত সব মার্কিন সামরিক ঘাঁটি। প্রয়োজনে আমরা এগুলোতে সরাসরি আঘাত করব।”