একটা সময় মানুষের স্বপ্ন ছিল আকাশে উড়ার। পূরণ হয়েছে সেই স্বপ্ন। মানুষ এখন পাখির চেয়েও স্ক্রিপ্তি গতিতে হাজার মাইল পাড়ি দেয়। তবে হাজার মাইল পাড়ি দিতে গিয়ে মাঝেমধ্যে অনেকের জীবনপ্রদীপ নিভে গেছে। যদিও উড়োজাহাজ এখন পর্যন্ত সবচেয়ে নিরাপদ ট্রান্সপোর্টেশন হিসেবে স্বীকৃত কিন্তু একবার দুর্ঘটনার মুখে পড়লে বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাই বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে মানুষের মনে বেশ ভীতি কাজ করে।
ইতিহাসে ঘটে যাওয়া ৫টি ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা ।
এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৮২
১৯৮৫ সালের ২৩শে জুন বোয়িংয়ের অন্যতম সেরা উড়োজাহাজ বোয়িং ৭৪৭ আটলান্টিক মহাসাগরের উপরে সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় বিধ্বস্ত হয়। এ সময় বিমানটি আইরিশ আকাশসীমায় ৩১০০০ ফুট উপর দিয়ে উড়ে চলছিল। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় সর্বমোট ৩২৯ জন প্রাণ হারায়। নিহতদের মধ্যে ২৬৮ কানাডিয়ান, ২৭ জন ব্রিটিশ এবং ২৪ জন ভারতীয় নাগরিক ছিলেন।
নাইন ইলেভেনের আগে এটাই ছিল বিশ্বের অন্যতম একটি প্রাণঘাতী সন্ত্রাসবাদী হামলা। কানাডার একটি তদন্ত কমিটি এই ঘটনার পেছনে ভারতীয় শিখ জঙ্গিগোষ্ঠীর সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছিল। ধারণা করা হয় হামলাকারী শিখ জঙ্গি তার সুটকেসে করে একাধিক শক্তিশালী বোমা নিয়ে বিমানে অবস্থান করছিল। ভ্রমনের ঠিক মধ্যপথে সে এই আত্মঘাতী হামলা চালায়। তবে কীভাবে এই সুটকেসটি নিরাপত্তাকর্মীদের চোখ এড়িয়ে বিমানে পৌঁছেছিল; এটা নিয়ে অনেক প্রশ্ন থেকে যায়।
টার্কিশ এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৯৮১
টার্কিশ এয়ারলাইন্স এর ৯৮১ ফ্লাইটটি ইস্তানবুল এয়ারপোর্ট থেকে প্যারিসে একটি বিরতির পরে ইংল্যান্ডের হার্টথ্রু এয়ারপোর্টে যাওয়ার জন্য তালিকাভুক্ত ছিল। ১৯৭৪ সালের ৩ মার্চ বিমানটি প্যারিস সংলগ্ন আরমিননভিলে ফরেস্টের উপরে বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় বিমানে অবস্থানরত ৩৪৬ জন যাত্রীই প্রাণ হারায়। । বিমানটি খাড়াখাড়িভাবে নিচের দিকে পতিত হয় এবং মুহুর্তের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যায়।
প্লেন ক্র্যাশের ইতিহাসে এখনও এটি ৪র্থ প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। পরবর্তীতে তদন্তে উঠে এসেছিল যে, বিমানটি ফ্রান্সের নিকটবর্তী একটি বন অতিক্রম করার সময় নির্মাণ ত্রুটির কারণে এর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কার্গো ডোর ভেঙ্গে যায়। ফলে প্রচুর পরিমানে বাতাস উড়োজাহাজে নিম্নমুখী চাপ সৃষ্টি করে এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিমানটি ভূপতিত হয়।
১৯৯৬ চার্থি দাদরী মধ্য-আকাশ সংঘর্ষ
১৯৯৬ সালের ১২ই নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লির পশ্চিমাংশের একটি গ্রাম চাখি দাদরী এর আকাশে এই দুর্ঘটনাটি সংগঠিত হয়েছিল। যে দুটি বিমানের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল, তার একটি ছিল সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স বোয়িং ৭৪৭। এটির যাত্রাপথ ছিল দিল্লি থেকে সৌদি আরবের দাহরান। অন্যটি ছিল কাজাকিস্থান এয়ারলাইন্সের লুসিয়ান আইএল-৭৬, যার যাত্রাপথ ছিল কাজাকিস্থান থেকে দিল্লি। এই সংঘর্ষে উভয় বিমানের ৩৫৯ জন যাত্রীর সকলেই নিহত হয়েছিল।
এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী মধ্য-আকাশ সংঘর্ষ এবং উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ইতিহাসের ৩য় প্রাণঘাতী ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এই দুর্ঘটনার মূল কারণ ছিল কাজাকিস্থান পাইলটের নির্ধারিত উচ্চতা থেকে আর নিম্নে বিমানটি পরিচালনা করা, যার কারণে বিমানটির লেজের অংশ আরব বিমানের বাম পাখায় ধাক্কা খায় এবং দুটি বিমানই আগুন লেগে মাটিতে ভূপাতিত হয়।
জাপানিস এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ১২৩
ফ্লাইট ১২৩ বিমানটি জাপানের রাজধানী টোকিও থেকে এসারকো যাওয়ার জন্য তালিকাভুক্ত ছিল। ১৯৮৫ সালের ১২ আগস্ট বোয়িং ৭৪৭ মডেলের এই বিমানটি প্রায় ১২ মিনিট ধরে একটি অগ্নিচূর্ণ ডিকম্প্রেশনের মধ্য দিয়ে যায় এবং ৩২ মিনিট পরে টোকিও থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে বিধ্বস্ত হয়। ১৫জন বিমান ক্রু এবং ৫০৯ জন যাত্রীর ৫০৫ জনই এই দুর্ঘটনায় নিহত হয়। দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে জানা যায়, ৭ বছর আগে সংগঠিত একটি দুর্ঘটনার পরে এই একই বিমানের লেজের অংশ মেরামত করা হয়েছিল। তবে এই মেরামত ছিলো ত্রুটিপূর্ণ এবং প্রচন্ড হাইড্রোলিক চাপে এই মেরামতের অংশটি খুলে যায়। এতে বিমানের লেজ ভেঙ্গে গিয়ে বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে
ফেলে।
এটি এখন পর্যন্ত জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনা।
আরো পড়ুন: ২৪২ যাত্রী নিয়ে ভারতে বিমান বিধ্বস্ত, বহু হতাহতের আশঙ্কা
টেনরিফ বিমান বিপর্যয়
এই দুর্ঘটনাটি ১৯৭৭ সালের ২৭ মার্চ সংঘটিত হয়েছিল। একটি একেএলএম বোয়িং ৭৪৭ বিমান সংকেত ছাড়া উড্ডয়নে চেষ্টারত ছিল এবং সংঘর্ষ হয়েছিল রানওয়েতে অবস্থানরত প্যান আম ৭৪৭ বিমানের সাথে। এই সংঘর্ষে একেএলএম এয়ারক্রাফটের কোন যাত্রীই বাঁচেন নি। ৫৮৫ জন যাত্রী এই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিল। কিন্তু আকস্মিকভাবে প্যান আমের ৬১জন ক্রু এবং ৩৯৬ জন যাত্রী সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিল। পাইলটের ত্রুটিই ছিল এই বিপর্যয়ের প্রধান কারণ। পাইলট ক্লিয়ারেন্স ছাড়াই উড্ডয়নের চেষ্টা করেছিলেন। তবে বলা হয় ঘন কুয়াশার কারণে বিমানের ক্রুরা সংঘর্ষের একদম কাছে পৌঁছানোর আগে প্যান আম উড়োজাহাজটি দেখতে পান নি।
এই ঘটনার অনেক বড় প্রভাব পড়েছিল সমস্ত এয়ারক্রাফট কমিউনিটিতে। অনেকেই পাইলটদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।