ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসন ও গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিশ্বজুড়ে চলা আন্দোলনের ঢেউ লেগেছে বাংলাদেশেও। সোমবার (৭ এপ্রিল) বিশ্বজুড়ে ‘স্টপ ওয়ার্ল্ড প্রোগ্রাম’ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়ে দেশে সব পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় মানিকগঞ্জের কানিজ ফাতেমা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজও পালন করেছে ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচি।
সোমবার (০৭ এপ্রিল) কর্মসূচির অংশ হিসেবে চলমান ঘটনার নিন্দা জ্ঞাপনের পাশাপাশি দেশটিতে গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিশ্ব সংস্থাগুলোর জরুরি হস্তক্ষেপের কামনা করেছে কানিজ ফাতেমা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
এ বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পক্ষ থেকে অধ্যক্ষ মুহম্মদ আব্দুল হালিম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, গাজার নির্যাতিত জনগণের সাথে গভীর শোক এবং দৃঢ় সংহতি প্রকাশ করছি। কারণ এই অঞ্চলটি ব্যাপক বেসামরিক নাগরিক হতাহত, নির্বিচার বোমাবর্ষণ এবং ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর হাত মৌলক মানবিক মর্যাদা বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে ন্যায়বিচার ও মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা এমন গণহত্যার মুখে উদাসীন থাকতে পারি না।
গাজায় ব্যাপক বোমাবর্ষণ, ধ্বংস, মৃত্যু এবং বাস্তুচ্যুতি ঘটনায় আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি। একইসঙ্গে সেখানে আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করা এবং সমগ্র জনসংখ্যাকে সম্মিলিত শাস্তির আওতায় আনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে চলমান ঘটনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে তিনটি দাবি জানানো হয়। সেগুলো হচ্ছে- এক. জাতিসংঘসহ সকল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বিশ্বের সরকারগুলোকে অবিলম্বে গাজায় চলমান নৃশংসতা বন্ধে হস্তক্ষেপ করতে হবে।
দুই. নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি ছাড়াও যুদ্ধবিধ্বস্ত জনগোষ্ঠীর কাছে খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা ছাড়াও জরুরি সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য মানবিক করিডোর চালু করতে হবে।
তিন. বিশ্ব গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে বর্তমান বাস্তবতা নথিভুক্ত করার পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধের অপরাধে অপরাধীদের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের সামনে জবাবদিহির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
এ সময় বিশ্বব্যাপী শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার এবং শান্তির সংগ্রামে ফিলিস্তিনের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানানো হয়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে নীরবতাকে গণহত্যার সাথে জড়িত থাকা আর নিরপেক্ষতাকে মানবতার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা উল্লেখ করে বিবৃতিতে গাজাবাসীর প্রতি ভালোবাসা ও সমর্থন জানানো হয়।
বিবৃতি প্রসঙ্গে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক আব্দুল কাইয়্যূম বিপুল দৈনিক ঢাকাকে বলেন, ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী গাজায় নৃশংস গণহত্যা চালাচ্ছে সেটি দেখে কানিজ ফাতেমা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিটি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই ক্ষুব্ধ এবং ব্যথিত। অবিলম্বে এ বর্বরতা থামানোর দাবি জানাই। স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমরা সব সময়ই ফিলিস্তিনি জনগণের সব ন্যায্য অধিকার, আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে।
প্রসঙ্গত, সোমবার বিশ্বজুড়ে নাগরিক এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘স্টপ ওয়ার্ল্ড প্রোগ্রাম’ পালিত হয়। এই দিনটিকে বিশ্বজুড়ে কেবল প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবেই নয়, বরং মানবতার পুনরুদ্ধারের জন্য একটি সম্মিলিত আহ্বান হিসেবেও বিবেচনা করা হচ্ছে।