১০:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

‘সাইবার বুলিং’র শিকার পুলিশ, নেই প্রতিকার

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ২১ সেপ্টেম্বর বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসাবে পদায়ন করা হয় মো. আব্দুল হান্নানকে। সম্প্রতি একটি ফেসবুক পেজে তার ছবি পোস্ট করে নানা ধরনের নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হয়। মামলা ছাড়াই গণহারে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের গ্রেফতার ও চাঁদাবাজির অভিযোগ করা হয় ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এমনকি ‘বিএনপিপন্থি’ পুলিশ কর্মকর্তা বলেও তকমা দেওয়া হয়। এ পুলিশ কর্মকর্তার বিচার একদিন হবে-এমন হুমকিও দেওয়া হয়।

ফেসবুকের এমন নেতিবাচক প্রচারণার বিষয়টি ওসি আব্দুল হান্নানকে তার এলাকার লোকজন ও আত্মীয়স্বজন অনেকে ফোন করে জানিয়েছেন। বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে আছেন জানিয়ে ওসি হান্নান বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর জেলার ১২টি থানার মধ্যে পরপর দুইবার শ্রেষ্ঠ ওসি নির্বাচিত হয়েছি। এরপরও একটি পক্ষ আমাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে।’

একইভাবে ফেসবুক পেজে ছবি দিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বংশাল থানার ওসি রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জিম্মি করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে রফিকুল ইসলামের দাবি, আওয়ামী লীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করায় ক্ষুব্ধ হয়ে এমন প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বিষয়টি ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছেন তিনি।

৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হয়েছে। ফলে তারা সামাজিক ও পারিবারিকভাবে হেয় হচ্ছেন। কিন্তু প্রতিকারে এখন পর্যন্ত পুলিশের শীর্ষ পর্যায় থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।

ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে হেয়প্রতিপন্ন করাকে সাইবার বুলিং বলে। এ বুলিংয়ে ভুক্তভোগী সামাজিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অতীতে কখনো পুলিশকে নিয়ে ব্যাপক আকারে এমন ঘটনা ঘটেনি। পুলিশের মনোবল ভাঙতে পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা চাঁদাবাজি, আগের পুলিশের মতো দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও গণগ্রেফতারের অভিযোগের সত্যতা আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করছেন অনেকে।

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, সাইবার বুলিং-এর কারণে তীব্র মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে কাজের ওপর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মেহতাব খানম বলেন, ‘যে কোনো বুলিং থেকে আমরা সাংঘাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই। আমাদের একেবারে মেরুদণ্ড ভেঙে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। অনেক সময় প্যানিং অ্যাটাক হয়।’

তিনি বলেন, ‘বুলিং-এর অনেকরকম সাইকোলজিক্যালি প্রভাব আছে। এ ধরনের মানসিক নির্যাতন আমাদের পুরো সত্তাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয়। নিজের সত্তাটাকে প্রশ্ন করতে শুরু করি। নিজের যোগ্যতা, দক্ষতা ও ক্ষমতাকে প্রশ্ন করতে থাকি। মানুষ হিসাবে আমার আত্মসম্মান নিয়ে চলার ক্ষেত্রেও বিরাট একটা ধস নামে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। দায়িত্ব পালনে বা সরকারি কাজে বাধা দানের কোনো সুযোগ নেই। যদি কেউ এ ধরনের সাইবার রিলেটেড ইস্যু করে থাকে, তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাইবার বুলিং-এর শিকার যারা : সাইবার বুলিং-এর শিকার হওয়াদের মধ্যে রয়েছেন লালমনির হাট জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) তরিকুল ইসলাম ও মাগুরা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মিনা মাহমুদা। এছাড়া গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানার ওসি মোস্তফা কামাল, ফেনির ছাগলনাইয়া থানার ওসি নজরুল ইসলাম, মৌলভীবাজার জেলাধীন কুলাউড়া থানার ওসি গোলাম আপসার, পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আব্দুর রাজ্জাক, জামালপুর মাদারগঞ্জ থানার ওসি শাহিনুর রহমান, বরগুনা জেলা পুলিশের ডিবির ওসি বশির আলম, নীলফামারী জেলার ডোমার থানার ওসি মো. আরিফুর রহমান, চট্টগ্রামের ভূজপুর থানার ওসি মো. আরজুন, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থানার ওসি মোখলেসুর রহমান আকন্দ, ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক, ঢাকা জেলার দোহার থানার ওসি মো. রেজাউল ইসলাম, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি এটিএম আকতার উজ জামান, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থানার ওসি মাহবুবুর রহমান, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানার ওসি আছলাম আলী, জামালপুরের মাদারগঞ্জ থানার ওসি শাহীনুর রহমান, নরসিংদীর পলাশ থানার ওসি মো. শহিদুল ইসলাম, বরিশালের গৌরনদী মডেল থানার ওসি ইউনুস মিয়া, চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার ওসি হাবিবুর রহমান, ঢাকা জেলার ধামরাই থানার ওসি মনিরুল ইসলাম, লালমনিরহাট জেলার সদর থানার ওসি আব্দুল কাদির ও একই জেলার হাতিবান্ধা থানার ওসি মাহমুদুন্নবি, কক্সবাজার জেলার ঈদগাহ থানার ওসি মছিউর রহমান, ফেনীর সোনাগাজী থানার ওসি কামরুজ্জামান, কুমিল্লা বরুড়া থানার ওসি কাজী নাজমুল হক, দিনাজপুর জেলার কোতোয়ালি থানার ওসি মতিউর, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থানার ওসি আবুল বাসার, চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার ওসি সোলাইমান, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি আল মামুন ও সোনারগাঁও থানার ওসি এমএ বারী, নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার ওসি জব্বার প্রমুখ।

পটুয়াখালী মহিরপুর থানার এসআই আবুল হোসেন, গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানার এএসআই রমিজ, নারায়ণগঞ্জ সদর থানার এসআই মাজহার, ঢাকার আশুলিয়া থানার এসআই মাসুদের বিরুদ্ধেও ফেসবুকে নানা অভিযোগ তুলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করে ভুক্তভোগীদের অনেকে বলেছেন, তারা সামাজিক ও পারিবারিকভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতের মধ্যে পড়ছেন।

জানা যায়, গত চার মাসে বিভিন্ন থানার ওসি, এসআই থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত শতাধিক কর্মকর্তার ছবি বিভিন্ন ফেসবুক আইডি ও পেজে শেয়ার করে নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বাদ যাচ্ছেন না নারী কর্মকর্তারাও। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেই অর্ধশতাধিক পুলিশের ছবি প্রকাশ করে নানা অভিযোগ তোলা হয়েছে। ভবিষ্যতে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের ফেসবুকের এ পেজটির ফলোয়ার ৩০ লাখের বেশি। সেখানে পোস্ট করা ছবি ও মন্তব্য শত শত আইডি থেকে দেদার শেয়ার হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা কতটুকু, তা যাচাই-বাছাই ছাড়াই হাজার হাজার লাইক ও কমেন্ট করা হচ্ছে। এতে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন অনেক পুলিশ কর্মকর্তা। বিষয়টি সিনিয়র কর্মকর্তাদের অবহিতও করেছেন তারা। পুলিশের পক্ষ থেকেও অভিযোগের সত্যতা যাচাই বা এসব ঘটনায় অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার কোনো উদ্যোগ নেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।

সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, পরিবর্তিত অবস্থায় এমন হুমকি থাকতে পারে। মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ‘অতীতে কেউ যদি আইন মোতাবেক কাজ না করে থাকে, তার সাজা তাকে পেতে হবে। আবার এখন যারা করবে না, (আইন মেনে কাজ না করা) তাদেরও ভবিষ্যতে শস্তি পেতে হবে।’ এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের মনোবল ধরে রাখার জন্য করণীয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনি যদি আকাম না করেন, দুর্নীতি না করেন, তাহলে মনোবল ঠিকই থাকবে। মনোবল তাদের থাকে না, যারা বেশি আকাম করে।’ সূত্র: যুগান্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সেভ করুন

‘সাইবার বুলিং’র শিকার পুলিশ, নেই প্রতিকার

সর্বশেষ আপডেট : ০৫:০০:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ২১ সেপ্টেম্বর বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসাবে পদায়ন করা হয় মো. আব্দুল হান্নানকে। সম্প্রতি একটি ফেসবুক পেজে তার ছবি পোস্ট করে নানা ধরনের নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হয়। মামলা ছাড়াই গণহারে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের গ্রেফতার ও চাঁদাবাজির অভিযোগ করা হয় ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এমনকি ‘বিএনপিপন্থি’ পুলিশ কর্মকর্তা বলেও তকমা দেওয়া হয়। এ পুলিশ কর্মকর্তার বিচার একদিন হবে-এমন হুমকিও দেওয়া হয়।

ফেসবুকের এমন নেতিবাচক প্রচারণার বিষয়টি ওসি আব্দুল হান্নানকে তার এলাকার লোকজন ও আত্মীয়স্বজন অনেকে ফোন করে জানিয়েছেন। বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে আছেন জানিয়ে ওসি হান্নান বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর জেলার ১২টি থানার মধ্যে পরপর দুইবার শ্রেষ্ঠ ওসি নির্বাচিত হয়েছি। এরপরও একটি পক্ষ আমাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে।’

একইভাবে ফেসবুক পেজে ছবি দিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বংশাল থানার ওসি রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জিম্মি করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে রফিকুল ইসলামের দাবি, আওয়ামী লীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করায় ক্ষুব্ধ হয়ে এমন প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বিষয়টি ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছেন তিনি।

৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হয়েছে। ফলে তারা সামাজিক ও পারিবারিকভাবে হেয় হচ্ছেন। কিন্তু প্রতিকারে এখন পর্যন্ত পুলিশের শীর্ষ পর্যায় থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।

ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে হেয়প্রতিপন্ন করাকে সাইবার বুলিং বলে। এ বুলিংয়ে ভুক্তভোগী সামাজিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অতীতে কখনো পুলিশকে নিয়ে ব্যাপক আকারে এমন ঘটনা ঘটেনি। পুলিশের মনোবল ভাঙতে পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা চাঁদাবাজি, আগের পুলিশের মতো দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও গণগ্রেফতারের অভিযোগের সত্যতা আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করছেন অনেকে।

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, সাইবার বুলিং-এর কারণে তীব্র মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে কাজের ওপর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মেহতাব খানম বলেন, ‘যে কোনো বুলিং থেকে আমরা সাংঘাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই। আমাদের একেবারে মেরুদণ্ড ভেঙে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। অনেক সময় প্যানিং অ্যাটাক হয়।’

তিনি বলেন, ‘বুলিং-এর অনেকরকম সাইকোলজিক্যালি প্রভাব আছে। এ ধরনের মানসিক নির্যাতন আমাদের পুরো সত্তাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয়। নিজের সত্তাটাকে প্রশ্ন করতে শুরু করি। নিজের যোগ্যতা, দক্ষতা ও ক্ষমতাকে প্রশ্ন করতে থাকি। মানুষ হিসাবে আমার আত্মসম্মান নিয়ে চলার ক্ষেত্রেও বিরাট একটা ধস নামে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। দায়িত্ব পালনে বা সরকারি কাজে বাধা দানের কোনো সুযোগ নেই। যদি কেউ এ ধরনের সাইবার রিলেটেড ইস্যু করে থাকে, তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাইবার বুলিং-এর শিকার যারা : সাইবার বুলিং-এর শিকার হওয়াদের মধ্যে রয়েছেন লালমনির হাট জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) তরিকুল ইসলাম ও মাগুরা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মিনা মাহমুদা। এছাড়া গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানার ওসি মোস্তফা কামাল, ফেনির ছাগলনাইয়া থানার ওসি নজরুল ইসলাম, মৌলভীবাজার জেলাধীন কুলাউড়া থানার ওসি গোলাম আপসার, পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আব্দুর রাজ্জাক, জামালপুর মাদারগঞ্জ থানার ওসি শাহিনুর রহমান, বরগুনা জেলা পুলিশের ডিবির ওসি বশির আলম, নীলফামারী জেলার ডোমার থানার ওসি মো. আরিফুর রহমান, চট্টগ্রামের ভূজপুর থানার ওসি মো. আরজুন, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থানার ওসি মোখলেসুর রহমান আকন্দ, ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক, ঢাকা জেলার দোহার থানার ওসি মো. রেজাউল ইসলাম, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি এটিএম আকতার উজ জামান, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থানার ওসি মাহবুবুর রহমান, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানার ওসি আছলাম আলী, জামালপুরের মাদারগঞ্জ থানার ওসি শাহীনুর রহমান, নরসিংদীর পলাশ থানার ওসি মো. শহিদুল ইসলাম, বরিশালের গৌরনদী মডেল থানার ওসি ইউনুস মিয়া, চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার ওসি হাবিবুর রহমান, ঢাকা জেলার ধামরাই থানার ওসি মনিরুল ইসলাম, লালমনিরহাট জেলার সদর থানার ওসি আব্দুল কাদির ও একই জেলার হাতিবান্ধা থানার ওসি মাহমুদুন্নবি, কক্সবাজার জেলার ঈদগাহ থানার ওসি মছিউর রহমান, ফেনীর সোনাগাজী থানার ওসি কামরুজ্জামান, কুমিল্লা বরুড়া থানার ওসি কাজী নাজমুল হক, দিনাজপুর জেলার কোতোয়ালি থানার ওসি মতিউর, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থানার ওসি আবুল বাসার, চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার ওসি সোলাইমান, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি আল মামুন ও সোনারগাঁও থানার ওসি এমএ বারী, নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার ওসি জব্বার প্রমুখ।

পটুয়াখালী মহিরপুর থানার এসআই আবুল হোসেন, গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানার এএসআই রমিজ, নারায়ণগঞ্জ সদর থানার এসআই মাজহার, ঢাকার আশুলিয়া থানার এসআই মাসুদের বিরুদ্ধেও ফেসবুকে নানা অভিযোগ তুলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করে ভুক্তভোগীদের অনেকে বলেছেন, তারা সামাজিক ও পারিবারিকভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতের মধ্যে পড়ছেন।

জানা যায়, গত চার মাসে বিভিন্ন থানার ওসি, এসআই থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত শতাধিক কর্মকর্তার ছবি বিভিন্ন ফেসবুক আইডি ও পেজে শেয়ার করে নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বাদ যাচ্ছেন না নারী কর্মকর্তারাও। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেই অর্ধশতাধিক পুলিশের ছবি প্রকাশ করে নানা অভিযোগ তোলা হয়েছে। ভবিষ্যতে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের ফেসবুকের এ পেজটির ফলোয়ার ৩০ লাখের বেশি। সেখানে পোস্ট করা ছবি ও মন্তব্য শত শত আইডি থেকে দেদার শেয়ার হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা কতটুকু, তা যাচাই-বাছাই ছাড়াই হাজার হাজার লাইক ও কমেন্ট করা হচ্ছে। এতে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন অনেক পুলিশ কর্মকর্তা। বিষয়টি সিনিয়র কর্মকর্তাদের অবহিতও করেছেন তারা। পুলিশের পক্ষ থেকেও অভিযোগের সত্যতা যাচাই বা এসব ঘটনায় অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার কোনো উদ্যোগ নেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।

সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, পরিবর্তিত অবস্থায় এমন হুমকি থাকতে পারে। মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ‘অতীতে কেউ যদি আইন মোতাবেক কাজ না করে থাকে, তার সাজা তাকে পেতে হবে। আবার এখন যারা করবে না, (আইন মেনে কাজ না করা) তাদেরও ভবিষ্যতে শস্তি পেতে হবে।’ এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের মনোবল ধরে রাখার জন্য করণীয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনি যদি আকাম না করেন, দুর্নীতি না করেন, তাহলে মনোবল ঠিকই থাকবে। মনোবল তাদের থাকে না, যারা বেশি আকাম করে।’ সূত্র: যুগান্তর